আবি রিভার পার্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ভাদুগরে কুড়ুলিয়া খালের তীরে অবস্থিত এক অপূর্ব বিনোদন কেন্দ্র, যা সবাই চেনে আবি রিভার পার্ক (Abi River Park) নামে। প্রায় ৪৮০ শতক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি তার নান্দনিক আয়োজন এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই শিশুপার্কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

আবি রিভার পার্ক নান্দনিক আয়োজন

আবি রিভার পার্কের চারপাশে সবুজ গাছগাছালি ঘেরা মনোরম পরিবেশে সাজানো নজরকাড়া স্থাপনা এবং বিভিন্ন প্রাণির প্রতিকৃতি দর্শকদের মুগ্ধ করে। পার্কের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ হলো এন্ডারসন খালের তীরে নির্মিত হাঙ্গর আকৃতির নৌকা ঘাট। এই ঘাটটি দর্শনার্থীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যেখানে দাঁড়িয়ে খালের স্নিগ্ধ জলে নৌকায় চড়ার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

বিনোদনের জন্য নানান রাইড

পার্কটিতে আছে বিভিন্ন রাইড যা ছোট থেকে বড় সব বয়সের দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত। এখানে আপনি পাবেন নাগরদোলা, পাইরেট শিপ, সুইং পিং, টয় ট্রেন, দোলনা এবং আরও অনেক কিছু। প্রতিটি রাইডই দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয় এবং একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

লেকে প্যাডেল বোট

আবি রিভার পার্কের লেকে দর্শনার্থীদের জন্য প্যাডেল বোটে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এটি পার্কের অন্যতম আকর্ষণ, যেখানে আপনি প্রিয়জনের সাথে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। লেকের স্নিগ্ধ পরিবেশে প্যাডেল বোটে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা।

মিনি চিড়িয়াখানা

পার্কটিতে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে যা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এখানে বিভিন্ন প্রাণির প্রদর্শনী রয়েছে যা শিশুদেরকে আনন্দ দেয় এবং শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। চিড়িয়াখানাটি পার্কের বিনোদনের সাথে শিক্ষার একটি অনন্য সমন্বয়।

আধুনিক কনভেনশন সেন্টার

আবি রিভার পার্কে পিকনিক, সেমিনার এবং যেকোনো ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠান করার জন্য রয়েছে আধুনিক কনভেনশন সেন্টার। এটি একটি প্রশস্ত এবং সুসজ্জিত স্থান যেখানে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন।

ক্যান্টিন

পার্কের ভেতরে রয়েছে একটি ক্যান্টিন যেখানে আপনি স্থানীয় এবং বিদেশি বিভিন্ন ধরণের খাবার উপভোগ করতে পারেন। পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সময় ক্যান্টিনে বিশ্রাম নিয়ে কিছু খাবার খাওয়ার সুযোগ পাবেন যা আপনার ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে।

আবি রিভার পার্ক: একটি সম্পূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র

আবি রিভার পার্কটি একটি সম্পূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র যেখানে আপনি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একটি সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন। পার্কের বিভিন্ন আকর্ষণ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা আপনার মনকে প্রশান্তি দেবে এবং একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

সময়সূচী ও প্রবেশমূল্য
আবি রিভার পার্ক সপ্তাহের সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। পার্কে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা।

যোগাযোগ
আবি রিভার পার্ক
ভাদুগর উত্তরপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মোবাইল: ০১৭৬৮-০৮৪৬০১
ফেইসবুক: Facebook

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সোহাগ, তিশা, তিতাস, রয়েল কোচ, বিআরটিসি কিংবা সোহাগ পরিবহণের বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড থেকে বাসে কাউতলি এসে বাস টার্মিনালের কাছ থেকে সিএনজি/অটোরিকশাইয় চড়ে আবি ফিউচার পার্ক যেতে পারবেন। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউতুলী ও শিমরাইলকান্দি থেকে নৌকায় চড়ে পার্কে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কোথায় থাকবেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক বাজার ও জগৎ বাজার এলাকায় হোটেল সাগর, হোটেল সইকত, হোটেল স্টার, আশিক প্লাজা, অবকাশ আবাসিক হোটেল, চন্দ্রিমা ও রহমান প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন
আবি পার্কের ক্যান্টিনে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে অবস্থিত রাজধানী হোটেল, গাঁও গেরাম রেস্টুরেন্ট ও হাজি বিরিয়ানি হাউজের বেশ সুনাম রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দর্শনীয় স্থান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কালভৈরব মন্দির, কেল্লা জামে মাজার, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি, ধরন্তি হাওর, হরিপুর জমিদার বাড়ি, ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল এবং কসবা বর্ডার হাট উল্লেখযোগ্য।

Similar Posts

  • কেল্লা শহীদ মাজার

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ শরীফটি কেল্লা শহীদ মাজার (Kella Shahid Mazar) নামে সারা বাংলাদেশে পরিচিত। এই মাজারের পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কাহিনী, যা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দরগা শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৬০ একর জমি দান করেন। আবার অনেকের মতে, হযরত শাহ…

  • বর্ডার হাট, কসবা

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার হাট (Bangladesh-India Border Haat) একটি অনন্য বানিজ্য কেন্দ্র যা দুই দেশের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হয়। ২০১৫ সালের ১১ই জুন এই বর্ডার হাটের উদ্বোধন করা হয়, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তের ২০৩৯ নং পীলার সংলগ্ন তারাপুর-কমলাসাগর সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। এটি শুধু একটি বানিজ্য কেন্দ্র নয়, বরং দুই দেশের মানুষের জন্য…

  • কালভৈরব মন্দির

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত কালভৈরব মন্দির (Sri Sri Kal Bhairab Temple) একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক হিন্দু তীর্থস্থান। শহরের মেড্ডা এলাকায় এই মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এবং এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি তার ২৮ ফুট উচ্চতার কালভৈরব মূর্তির জন্য বিখ্যাত, যা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক উচ্চতার মূর্তি হিসেবে পরিচিত।…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *