কালভৈরব মন্দির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত কালভৈরব মন্দির (Sri Sri Kal Bhairab Temple) একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক হিন্দু তীর্থস্থান। শহরের মেড্ডা এলাকায় এই মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এবং এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি তার ২৮ ফুট উচ্চতার কালভৈরব মূর্তির জন্য বিখ্যাত, যা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক উচ্চতার মূর্তি হিসেবে পরিচিত।

কালভৈরব মূর্তির ইতিহাস

১৯০৫ সালে নির্মিত এই বিশালাকার মূর্তিটি স্থানীয় জমিদার নূর মোহাম্মদের দান করা জমিতে স্থাপন করা হয়। কাশীশ্বর দেবাদিদেব মহাদেব নিজ শরীরের অংশ থেকে কালভৈরবের সৃষ্টি করে তাকে কাশীধাম রক্ষার ভার প্রদান করেন। স্থানীয় দূর্গাচরণ আচার্য স্বপ্নে প্রাপ্ত নির্দেশ অনুসারে মাটি দিয়ে এই বিশালাকার কালভৈরব মূর্তি তৈরি করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মূর্তিটি পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজ এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ২৮ ফুট উঁচু শ্রী শ্রী কালভৈরব মূর্তি ও মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজটি স্থানীয় ভক্তদের সক্রিয় সহযোগিতায় সম্ভব হয়।

মন্দিরের অন্যান্য স্থাপনা

শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরের প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি ও স্থাপনা। মন্দিরের বাম পাশে আলাদা ভবনে ১০৫ বছরের পুরনো ১১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের শ্রী শ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ রয়েছে। এছাড়াও এখানে দেবী পার্বতী, শ্রী শ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ, কালী মূর্তি, দূর্গামন্দির, সরস্বতী দেবী, শ্রী শ্রী কালভৈরব নাটমন্দির এবং দুইটি মঠ রয়েছে।

বার্ষিক উৎসব ও পূজা

প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে কালভৈরব মন্দিরে চার দিনব্যাপী পূজা, হোমযজ্ঞ, মেলা সহ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই সময় শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালদ্বীপ, চীন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পূজারী, ভক্ত এবং দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। মন্দির প্রাঙ্গণ তখন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কালভৈরব মন্দিরের গুরুত্ব

কালভৈরব মন্দিরের গুরুত্ব কেবল ধর্মীয় দিকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত। এখানকার স্থাপত্য, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা বিভিন্ন প্রতিমা ও স্থাপনা ধর্মীয় ভক্তদের পাশাপাশি শিল্পপ্রেমীদের কাছেও আকর্ষণীয়।

কালভৈরব মন্দিরের গুরুত্ব কেবল ধর্মীয় দিকেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। মন্দিরের প্রাঙ্গণে থাকা বিভিন্ন প্রতিমা ও স্থাপনা ধর্মীয় ভক্তদের পাশাপাশি শিল্পপ্রেমীদের কাছেও সমানভাবে আকর্ষণীয়।

স্থাপত্য ও ঐতিহ্য

কালভৈরব মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী অনন্য। ২৮ ফুট উচ্চতার কালভৈরব মূর্তিটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক উচ্চতার মূর্তি। মন্দিরের প্রতিটি কোণে থাকা প্রাচীন স্থাপত্য পর্যটকদেরকে মুগ্ধ করে। এই মন্দিরের প্রতিটি ইট ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী।

পর্যটকদের আকর্ষণ

মন্দিরের নান্দনিক স্থাপত্য ও ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখানে দেবী পার্বতী, শ্রী শ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ, কালী মূর্তি, দূর্গামন্দির, সরস্বতী দেবী এবং শ্রী শ্রী কালভৈরব নাটমন্দির রয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ানোর সময় পর্যটকরা এদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

কালভৈরব মন্দিরে বিভিন্ন বার্ষিক উৎসব ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে চার দিনব্যাপী পূজা, হোমযজ্ঞ এবং মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পূজারী ও ভক্তরা এখানে আসেন। এই অনুষ্ঠানগুলি স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ।

শিল্পপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়

মন্দিরের প্রাঙ্গণে থাকা প্রতিমা ও স্থাপনা শিল্পপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। প্রতিটি মূর্তির নকশা ও স্থাপত্য শৈলী শিল্পপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। মন্দিরের প্রতিটি কোণ ঘুরে দেখার সময় তারা প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য উপভোগ করেন।

DCIM\100MEDIA

সংস্কার ও সংরক্ষণ

মন্দিরের প্রাচীন স্থাপনা ও মূর্তিগুলো সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ভক্তবৃন্দের সহায়তায় মন্দিরের সংস্কার কাজ পরিচালিত হয়। মন্দিরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো হয়, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে এবং তা উপলব্ধি করতে পারে।

উপসংহার

শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দির একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ধন যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গৌরব। এর প্রাচীন স্থাপনা, বিশালাকার মূর্তি এবং বার্ষিক উৎসব মন্দিরটিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে। ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা প্রতিদিন হাজারো ভক্ত ও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কালভৈরব মন্দির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল প্রতীক।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী বাসে চড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলাস্থ বিশ্বরোড আসা যায়। সরাইল বিশ্বরোড এসে রিকশা বা সিএনজির মত স্থানীয় পরিবহণে মেড্ডা এলাকার অবস্থিত কালভৈরব মন্দির যেতে পারবেন।

সবচেয়ে ভালো হয় ঢাকা হতে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে সরাসরি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেলওয়ে ষ্টেশনে চলে আসা। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকেটের ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১৪৫ থেকে ৪৮৯ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেলওয়ে ষ্টেশন হতে মন্দিরে যাওয়ার লোকাল পরিবহণ পাবেন।

কোথায় খাবেন
কালভৈরব মন্দির এলাকায় তেমন ভাল খাবারের ব্যবস্থা নেই। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট পাবেন।

কোথায় থাকবেন
ঢাকা হতে চাইলে দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে ধরন্তি হাওর দেখে ফিরে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে রাত্রিযাপনের জন্য ভালো মানের হোটেলের সন্ধান পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে আসতে হবে। এছাড়া নাসিরনগরে ডাক বাংলোতেও রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। আর সরাইল বিশ্বরোডে সাধারণ মানের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

Similar Posts

  • বর্ডার হাট, কসবা

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার হাট (Bangladesh-India Border Haat) একটি অনন্য বানিজ্য কেন্দ্র যা দুই দেশের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হয়। ২০১৫ সালের ১১ই জুন এই বর্ডার হাটের উদ্বোধন করা হয়, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তের ২০৩৯ নং পীলার সংলগ্ন তারাপুর-কমলাসাগর সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। এটি শুধু একটি বানিজ্য কেন্দ্র নয়, বরং দুই দেশের মানুষের জন্য…

  • কেল্লা শহীদ মাজার

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ শরীফটি কেল্লা শহীদ মাজার (Kella Shahid Mazar) নামে সারা বাংলাদেশে পরিচিত। এই মাজারের পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কাহিনী, যা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দরগা শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৬০ একর জমি দান করেন। আবার অনেকের মতে, হযরত শাহ…

  • আবি রিভার পার্ক

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ভাদুগরে কুড়ুলিয়া খালের তীরে অবস্থিত এক অপূর্ব বিনোদন কেন্দ্র, যা সবাই চেনে আবি রিভার পার্ক (Abi River Park) নামে। প্রায় ৪৮০ শতক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি তার নান্দনিক আয়োজন এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই শিশুপার্কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। আবি…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *