নীলাচল

নীলাচল

নীলাচল: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অদ্বিতীয় পর্যটন স্থল

নীলাচল (Nilachal) একটি অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জগৎ, যা বাংলাদেশের পর্যটন শীর্ষকে সাঁজানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। নীলাচল টাইগার পাড়ায় অবস্থিত, যেটি বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই সোনার প্রাকৃতিক স্থলটি বাংলাদেশের প্রশংসিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অনেকবার।

নীলাচল
নীলাচল

নীলাচলের অপূর্ব সৌন্দর্য

নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় আর মেঘের অপূর্ব মিতালী আর তুলনাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সকালে মেঘের ভেলার খেলা আর বিকেলের সূর্যাস্ত এই দুইটি সময়ই নীলাচল তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখা যায় আবার মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে দূরের কক্সবাজার সাগর সৈকত হাতছানী দেয় পর্যটকদের। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা সমানভাবে বিমোহিত করে পর্যটকদের। নীলাচলে বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তকালে হাতের কাছে মেঘ খেলা করে। নীলাচলের একেক স্থান থেকে একেক রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।

নীলাচলের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য

নীলাচলে আসা পর্যটকদের জন্য আছে কিছু অতীতানুসন্ধান, অভ্যন্তরীণ চিন্তা আর প্রশান্তির মুহূর্ত। এখানে বারবার চলে যেতে মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত বা অত্যধিক শহরের উপার্জনে জড়িত জীবনধারা থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের মন খোলে দেয়া হয়। নীলাচলে পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে পারেন। পরবর্তীতে শুধুমাত্র যারা রিসোর্টে রাত্রি যাপন করেন তাদেরই থাকার অনুমতি মিলে। যদি মেঘের দেখা পেতে চান তবে খুব সকালে যেতে হবে নীলাচল।

নীলাচলে ভ্রমণের উপকারিতা

নীলাচলে ভ্রমণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল প্রকৃতির সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করা। পাহাড়ের শিখরে উঠে দেখা যায় সকালের মেঘ আর বিকেলের সূর্যাস্তের অসমান্য সৌন্দর্য্য, যা মানুষের মন ও চিন্তা পরিবর্তন করে। এটি আধুনিক জীবনের অতি দুর্দান্ত পার্থক্য। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা পর্যটকদের জন্য নীলাচল হতে চাইলে অবশ্যই ভ্রমণের তারিখটি মানতে হবে এবং সঠিক পর্যটন প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।

নীলাচল
নীলাচল

নীলাচলের ভ্রমণের সময়

নীলাচলে সময় অনেকটা আধুনিক জীবনের তাণ্ডবের অস্ত্রোপচার মনে হয়। এখানে আসার সময়টি কোনো সহজ বিষয় নয়। সবার প্রথমেই পর্যটকেরা তাদের ভ্রমণের তারিখ ঠিক করতে হবে। পরবর্তীতে কোথায় থাকা যেতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। নীলাচলে পর্যটকদের জন্য প্রচুর হোটেল, রিসোর্ট এবং বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা আছে, যা তাদের জন্য অবস্থানের সুবিধা নিয়ে দেয়। সাধারণত পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে পারেন। যদি মেঘের দেখা পেতে চান তবে খুব সকালে যেতে হবে নীলাচল।

নীলাচল যাবার উপায়

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্যামলি, সৌদিয়া, এস. আলম, ইউনিক, সেন্ট মার্টিন পরিবহন ও হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৮০০-৯০০ টাকা ও এসি ১২০০-১৮০০ টাকা। রাত ৯-১০টায় রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন বান্দরবান। এছাড়া ট্রেন বা এয়ারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবান যেতে পারবেন।

চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে।

বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও জীপ পাওয়া যায়। নীলাচলে অবস্থানের সময় অনুযায়ী অটো রিকশায় যাওয়া আসার জন্য ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা আর, জীপ ৮০০-১২০০ টাকা আর চাঁদের গাড়ি ভাড়া করতে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা লাগে। যে পরিবহনেই যান একটু দরদাম করে নিবেন ঠিকমতো।

কোথায় থাকবেন

নীলাচলে থাকতে চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টের তিনটি কটেজের একটি থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার জন্য। প্রতিটি কটেজে দুইটি করে রুম আছে, প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা। নীলাচলে থাকতে চাইলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছে বলেই আপনি বান্দরবান শহরের হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে থাকতে পারবেন। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে:

হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল হিলটন বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
রিভার ভিউ শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

নীলাচল
নীলাচল

কোথায় খাবেন

নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে রাত্রি যাপন করলে কতৃপক্ষ খাবারের ব্যবস্থা করে। ফরেস্ট হিল নামে শুধুমাত্র একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, এছাড়া খাবারের তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনে বান্দরবান থেকে হালকা খাবার সাথে নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন কিংবা নীলাচল থেকে বান্দরবান শহরে ফিরে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্যে রয়েছে বেশি কিছু রেস্তোরা, তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।

শেষ কথা

নীলাচলে ভ্রমণ বাংলাদেশের পর্যটন খোরাকের মতো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অদ্ভুত স্থানে আসুন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মনোযোগ দিন। আপনি নিশ্চিতভাবে নীলাচলের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অধ্যায় উপভোগ করবেন। অতএব, ভ্রমণ পরিকল্পনা করার সময় নীলাচল একটি প্রাথমিক বিচারে থাকতে পারে।

নীলাচল – একটি অদ্ভুত আধুনিক পর্যটন গল্প, যা আপনার মনে অবিস্মরণীয় রাখতে সাহায্য করবে। আসুন, বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক অদ্বিতীয় স্থলে অপূর্ব অভিজ্ঞতা অধ্যায় করুন। আপনি নিশ্চিতভাবে তা পুনরাবৃত্তি করবেন!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *