অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ

অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জ জেলার সুন্দর অষ্টগ্রাম হাওর একটি অদ্ভুত দর্শনীয় স্থান, যা প্রকৃতির নানা সৌন্দর্যে সুসজ্জিত। এই পোস্টে আমরা এই অষ্টগ্রাম হাওরের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক মাহকাব্য, এবং ভ্রমণযোগ্য স্থানের সম্পর্কে জানবো। এছাড়া, বর্ষা এবং শীতকালে এই হাওরে অনুভূতি করা হোয়ার্ডার সাথে এককভাবে বিচরণ করা হয় কিভাবে, এটি সব তা জানতে আসুন।

অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ
অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ

অষ্টগ্রাম হাওর এক নজরে

অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা, অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক হাওর। এই হাওরটি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছির নগর, উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা, এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা অষ্টগ্রাম হাওরকে ঘিরে রয়েছে।

অষ্টগ্রাম হাওরের অবস্থান ও পরিবেশ

অষ্টগ্রাম হাওরটি হাওরের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রাকৃতিক একটি দর্শনীয় স্থান। হাওরের সাথে মিলিয়ে গড়েছে শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্যের অসীম রান্না হয়। চারপাশে যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝেই ছবির মত সুন্দর ছোট ছোট গ্রাম গুলো ভেসে আছে, যা পরিবারকে একটি নিজস্ব আশ্রয় সরবরাহ করে।

অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ
অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ

অষ্টগ্রাম হাওরে বর্ষার মৌসুম

অষ্টগ্রাম হাওর হলো বর্ষার মৌসুমে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। বর্ষাকালে, এই হাওরটি অপূর্ব সৌন্দর্যের সাথে ভরা যায়। ভারী বৃষ্টির ফলে হাওরে অনেক জল জমে আসে এবং এটি অদ্ভুত রূপ ধারণ করে। এই সময়ে হাওরের সমাপ্ত অংশে ছোট ছোট নৌকায় মানুষের যাতায়াত, সামাজিক উৎসব, এবং বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর বৃষ্টির সাথে অষ্টগ্রাম হাওর নতুন অঙ্গ নিয়ে উদয় করে এবং এটির সৌন্দর্যের নতুন দিক প্রকাশ পায়।

অষ্টগ্রাম হাওরে ভ্রমণযোগ্য সময়

অষ্টগ্রাম হাওর বর্ষাকালে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। বর্ষা হলে এই হাওরে ভ্রমণ করতে সময় প্রায় অপার্থিব। প্রকৃতির ভিন্ন রূপে এই হাওর জেগে উঠে এবং সবটি স্বরূপ দেখা যায়। চারপাশে একদিকে শুধু পানি এবং পানি, অপার্থিব সৌন্দর্যের একটি ছবি প্রদর্শন করে।

সুন্দর গ্রামগুলি

হাওরের মাঝে অবস্থিত কিশোরগঞ্জ জেলার এই অষ্টগ্রাম হাওর আপনাকে অদ্ভুত গ্রামগুলির সাথে পরিচিত করার সুযোগ দেয়। বর্ষায় যখন সব জায়গা পানির ভেতরে মুছে যায়, তখন এই গ্রামগুলি আরও সুন্দর হয়ে উঠে। বৃষ্টির পানিতে মুদের রং আরও উজ্জ্বল হয়ে আসে এবং গ্রামের সবুজ পৃষ্ঠভূমির উপর তাড়াতাড়ি ছবির মতো আঘাত ফেলে।

উত্তাল বতাস ও মাঝির গান

বর্ষা এবং শীতকালে অষ্টগ্রাম হাওরে অধিক হাওয়া বহুত উত্তাল হয়ে উঠে। এটি হাওরের মুখে দিয়ে বতাসের এক অদভুত আবেগ দেখাচ্ছে। মোহনা নদীর সাথে একত্র হোকার জন্যে এটি একটি আদর্শ স্থান। এখানে বসে থাকা স্থানীয় মাঝিরা তাদের সুন্দর গানের মাধ্যমে হাওরের আবেগ মুক্ত করতে অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধি অনুভব করেন। হাওরের সাথে মিশে গুঞ্জপূর্ণ গানগুলি অষ্টগ্রাম হাওরকে একটি অদভুত শব্দময় আলাদা জগতে পৌঁছে দেয়।

অষ্টগ্রাম হাওরে যাতায়াত

অষ্টগ্রাম হাওরে যাতায়াত করা হয় ছোট নৌকাগুলির মাধ্যমে। এই ছোট নৌকা যাতায়াতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় এবং এটি আপনার অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণকে আরও রোমান্টিক এবং মজাদার করে তোলে।

অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ
অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ

যেভাবে যাবেন

সবচেয়ে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১০০-১৬০ টাকা।

অথবা ঢাকার গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাস যাতায়াত, অনন্যা সুপার বাসে কুলিয়ারচর আসতে পারবেন। আসতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। ভাড়া ১৫০ টাকা।

অথবা যে কোন ট্রেনে ভৈরব রেল স্টেশনে নেমে, রিক্সায় ভৈরব বাজারে চলে আসুন। সেখান থেকে লোকাল সিএনজি ৪০/৫০ টাকা ভাড়ায় কুলিয়ারচর চলে আসতে পারবেন।

কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা / ইজিবাইক নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। লঞ্চঘাট হতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত নিদৃষ্ট সময়ে লঞ্চ অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলাচল করে। লঞ্চে কুলিয়ারচর থেকে অষ্টগ্রাম যাওয়ার জন প্রতি ভাড়া ৬০ থেকে ১০০ টাকা। সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। মনে রাখবেন কুলিয়ারচর থেকে অস্টগ্রামগামী লঞ্চ ট্রেনের সাথে সিডিউল মেনে চলাচল করে। সম্প্রতি কুলিয়ারচর থেকে অষ্টগ্রাম স্পীড বোট চালু হয়েছে, জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় এসব স্পিড বোটে যেতে পারেন। আর দলবেধে গেলে লঞ্চঘাট থেকে পছন্দ মত একটা ইঞ্জিন নৌকা ঠিক করে নিতে পারবেন আপনার প্রয়োজন মত।

শুকনো মৌসুমে চাইলে সড়ক পথে অষ্টগ্রাম যেতে পারেন তবে এর জন্য আপনাকে বাজিতপুর উপজেলায় আসতে হবে। ট্রেনে আসলে ভাগলপুর রেলস্টেশনে নেমে ইজিবাইকে বাজিতপুর আসতে পারেন। যদি বাসে করে আসেন তবে ঢাকা থেকে বাজিতপুরের একটি বিআরটিসি বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী যেকোন বাসে করে কটিয়াদি নেমে বাস স্টপ থেকেই বাজিতপুরের সিএনজি পাবেন। বাজিতপুর বাজার থেকে ইজিবাইক বা সিএনজি যোগে চলে আসুন দিঘির পাড়। ঘাটে নৌকায় ১০ মিনিটে নদী পার হয়ে দেখতে পারবেন ইজিবাইক কিংবা মোটরসাইকেল অষ্টগ্রাম গামী যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে। মোটরসাইকেলে অষ্টগ্রাম যেতে জনপ্রতি ১০০ টাকা লাগে।

যা দেখবেন

যতক্ষণ আপনি নৌকায় ঘুরে বেড়াবেন নিশ্চিত তা আপনার ভালো লাগবে। হাওরের রূপ দেখা ছাড়াও মিটামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোডে একটি বিকেল অতিবাহিত করে যেতে পারেন। অষ্টগ্রাম থানা সদরে আছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যের মিশিলে নির্মিত পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। এই মসজিদের নান্দ্যনিকতা সবাইকে আকর্ষণ করে।

যদি কোন ভরা পূর্নিমায় হাওরে যেতে পারেন তবে তা হতে পারে আপনার জন্য মনে রাখার মত একটি রাত। নৌকায় ভাসতে ভাসতে চাঁদের আলোয়া গা ভেজাতে পারেন কিংবা পছন্দমতো জায়গা দেখে ক্যাম্পিং করে ফেলতে পারেন। ক্যাম্পিং করতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস তাবু, হ্যামক ইত্যাদি ঢাকা থেকেই সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা

অষ্টগ্রামে থাকার জন্যে খুব ভাল মানের আবাসিক হোটেল নেই। প্রথম ও প্রধান জায়গা হলো জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। রুম ভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়া। ডাক বাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। ০১৭১-০২৯১২২৫ / ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯ এই নাম্বারে ফোন করে কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিন। অষ্টগ্রাম বাজারে রংধনু আবাসিক হোটেল (০১৯১৬-১২২৪১৯), মৌ-মিতু আবাসিক (০১৭১৫-৩৪৫১৪২) ও ঝলক আবাসিক হোটেল (০১৯৭৩-২৭৮৪৩১) নামে তিনটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভেদে ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

আর ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাও পারবেন। তবে ক্যাম্পিং করার জন্যে ভালো একটা জায়গা নির্বাচন করার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিন।

কোথায় খাবেন / কি খাবেন

নিজেরা রান্না করতে চাইলে সকাল সকাল স্থানীয় বাজার থেকে কিনে নিয়ে রান্না করতে পারেন। অষ্টগ্রাম বাজারে অবস্থিত নাজির কিংবা প্রভাতি হোটেলে হাওরের তাজা মাছের বিভিন্ন পদের তরকারি পাওয়া যায়। সদ্য হাওর থেকে ধরে মাছের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। অষ্টগ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা পনির পাওয়া যায় তবে এর জন্য আপনাকে অন্তত এক-দুইদিন আগে স্থানীয় পনীর বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে পরিমাণ জানাতে হবে। শীতকালে অষ্টগ্রাম ভ্রমণে গেলে এখনকার বিখ্যাত প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা মুরালি খেয়ে দেখতে পারেন।

সতর্কতা

ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ১৫ বা এর বেশী মানুষ গেলে হয়তো স্থানীয় থানায় ওসির কাছে রিপোর্ট করতে হতে পারে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যদি নৌকায় সারা রাত পার করার ইচ্ছা থাকে তবে যথাযম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন, স্থানীয় কেউ সাথে থাকলে ভাল হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *