ঝুলন্ত ব্রিজ
রাঙ্গামাটি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। এই অদ্বিতীয় জেলায় বহুধা প্রাকৃতিক ঝর্না, পাহাড়, লেক, ও অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অসাধারণ ও আকর্ষণীয় হলো রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু, অথবা ঝুলন্ত ব্রিজ। এই ব্রিজ রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক আশ্চর্যের প্রতীক হিসাবে পরিচিত।

ঝুলন্ত ব্রিজ:
রাঙ্গামাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের অনেক প্রিয় গন্তব্য, কারণ এখানে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন সুযোগ রয়েছে। ঝুলন্ত ব্রিজও একটি অত্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উদাহরণ। এই ব্রিজটি কাপ্তাই লেকের উপর নির্মিত, এবং এর দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম ও আকর্ষণীয়। ব্রিজে প্রবেশ করে পর্যটকরা আপনার সম্মুখে একটি অপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঝর্ণা দেখতে পাবেন। এটি একটি চমৎকার দৃশ্য যেখানে পাহাড়ের উপর পুরোনো পাথরের নিত্য প্রবাহী নদীর অবিরত ধারা বিকর্ষণ এবং মনোরম প্রদর্শনী দেওয়া হয়।
ঝুলন্ত ব্রিজের আকর্ষণ:
ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই লেকের একটি অপূর্ব দৃশ্য নিয়ে এসেছে। এই ব্রিজে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের সবুজ পানির মধ্যে মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অদ্ভুত সমন্বয় যেখানে পাহাড়ের সুন্দর রুপ এবং সাথে মিলিয়ে রঙিন বন একটি আশ্চর্যজনক দৃশ্য প্রদর্শন করে।
ঝুলন্ত ব্রিজে অভিজ্ঞতা:
ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশ করে পর্যটকরা নিজেদের পর্যটনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত আনন্দদায়ক করে পেতেন। ব্রিজে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায় এবং তারপর ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করা যায় এবং সেখানে পাহাড়ের সুন্দর নাচে প্রশান্ত এবং অনুভূতি সুখানুভূতি পেতে পারেন।
ঝুলন্ত ব্রিজ পর্যটনের অন্যান্য সুযোগ:
ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশ করার জন্য পর্যটকদের প্রতি ২০ টাকা ফি দিতে হয় যা খুবই কম এবং সহজলভ্য। আপনি পাহাড়ের সুন্দর নাচে স্থানীয় কুলিশ ব্রুকের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন এবং তাদের সাথে আপনি পাহাড়ি প্রশান্ত বারিশালায় গিরতে পারেন। এছাড়াও, কাপ্তাই লেক ভ্রমণের জন্য আপনি ব্রিজের নিচে ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া নিতে পারেন, যা অত্যন্ত আনন্দদায়ক এবং মনোরম।
কখন যাবেন ও কি দেখবেন
ঝুলন্ত ব্রিজ (Hanging Bridge) দেখতে বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারেন। তবে বর্ষায় অতি বৃষ্টি হলে অনেক সময় ঝুলন্ত ব্রিজের উপর পানি উঠে যায়। সেইসময় ঝুলন্ত ব্রিজের উপরে যাওয়া না। তাই বর্ষায় গেলে আগেই খোঁজ নিয়ে যাবেন। সাধারণত শীতের আগে আগে ও শীতকালেই পর্যটকগন ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণে যান। রাঙ্গামাটি গেলে শুধু ঝুলন্ত ব্রিজ নয় আশেপাশে আছে আরও দর্শনীয় স্থান যা আপনি একইদিনে একসাথে ঘুরে দেখতে পারবেন। সারাদিনের জন্যে ট্রলার রিজার্ভ করে নিলে ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাজবন বিহার, লেক ভ্রমণসহ আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখায়। কি দেখবেন সেইভাবে পরিকল্পনা করে ট্রলার/বোট রিজার্ভ করে নিন।

কিভাবে যাবেন
ঢাকা হতে ঢাকার ফকিরাপুল মোড়, আব্দুল্লাহপুর ও সায়দাবাদে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টার রয়েছে। এই বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ৯ টা এবং রাত ৮ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১ টার মধ্যে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা টু রাঙ্গামাটি এসি বাসের প্রতি সীট ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া সকল নন-এসি বাসের ভাড়া ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।
চট্টগ্রাম হতে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙ্গামাটিগামী বিভিন্ন পরিবহণের লোকাল ও গেইটলক/ডাইরেক্ট বাস পাওয়া যায়। ভাড়া একটু বেশি হলেও গেইটলক বা ডাইরেক্ট বাসে উঠা উচিত। চট্টগ্রাম হতে রাঙ্গামাটি ডাইরেক্ট বাস ১৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। চট্টগ্রামের বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকেও রাঙ্গামাটি যাবার বাস পাবেন।
রাঙ্গামাটি শহরের তবলছড়িতে নেমে অটোরিক্সা বা সিএনজিতে করে সরাসরি ঝুলন্ত ব্রিজে যাওয়া যায়। তবলছড়ি থেকে ঝুলন্ত ব্রিজে সিএনজি ভাড়া লাগে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর রাঙ্গামাটির বনরূপা থেকে সিএনজি ভাড়া লাগে ১২০ টাকা।
রাঙ্গামাটি থাকার ব্যবস্থা
রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় লেকের কাছাকাছি হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন। তাহলে হোটেল থেকে কাপ্তাই লেকের পরিবেশ ও শান্ত বাতাস উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া কম খরচে থাকতে বোডিং এ যোগযোগ করতে পারেন। বোডিংগুলোতে থাকতে খরচ কম হলেও এগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। উল্লেখযোগ্য কিছু আবাসিক হোটেলের নামঃ
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল : রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত এ হোটেলে নন-এসি সিঙ্গেল বেড, ডাবল বেড ও ত্রিপল বেডের রুমের ভাড়া যথাক্রমে ৮০০, ১০০০ ও ১২০০ টাকা। এসি কাপল বেড রুম পাবেন ১৬০০ টাকায় ও এসি ত্রিপল বেড রুম পাবেন ২০০০ টাকাইয়। যোগাযোগ: 01726-511532, 01815-459146
পর্যটন মোটেল : রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশে অবস্থিত এ হোটেলটিতে নন-এসি ডাবল বেডের রুম পেতে ১০০০-১২০০ টাকা গুনতে হবে। আর এসি ডাবল বেড পাবেন ১৫০০-১৮০০ টাকায়। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬৩১২৬
রংধনু গেস্ট হাউজ : এই গেস্ট হাউজে ফ্যামিলি বেড বা কাপল বেড ভাড়া নিতে খরচ পড়বে যথাক্রমে ৬৫০ ও ৫০০ টাকা। যোগাযোগ: 01816-712622, 01712-392430
খাওয়া দাওয়া
রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের অসংখ্য খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সাধ্যের মধ্যে যেকোন রেস্টুরেন্টে আপনার প্রতিবেলার খাবার সেরে ফেলতে পারেন। রেস্টুরেন্টে পাবেন স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। ভিন্ন স্বাদের এইসব খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- একসাথে দলগত ভাবে গেলে খরচ কমে যাবে।
- অফসিজনে ও ছুটির দিন ব্যাতিত গেলে খরচ কম হবে।
- ট্রলার/বোট রিজার্ভ করার সময় কি দেখবেন কোথায় যাবেন ভালো মত বলে নিন।
- রিজার্ভ করার সময় ঠিকমত দরদাম করে নিন।
- লেকের কাছাকাছি কোন হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন।
- কোথাও কোথাও লেকের পানির গভীরতা অনেক, নামতে চাইলে মাঝিকে জিজ্ঞেস করে নিন।
- অহেতুক কোন রিক্স নিবেন না।
- একদিনেই কমন স্পট গুলো ঘুরে বেড়ানো যায়।
- পরিবেশে ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় দয়া করে এমন কিছু করবেন না।
- স্থানীয় মানুষদের সাথে শালীন আচরণ করুন।
সমাপ্তি:
রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের জন্য একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান এবং বাংলাদেশের পর্যটন উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই ব্রিজে প্রবেশ করে পর্যটকরা নিজেদের পর্যটনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত আনন্দদায়ক করে পেতেন এবং এখানে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পরিচিত হতে পারেন।