নরসুন্দা লেকসিটি
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বুক চিরে বয়ে চলা নরসুন্দা নদীকে কেন্দ্র করে নরসুন্দা লেকসিটি (Narashunda Lake City) গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর দুই পাড়ে সৌন্দর্য উপভোগ এবং পৌর নাগরিকদের জীবন মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ শহরে অনেকগুলি দৃষ্টিন্দন সেতু ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া, এখানে সুপরিসর ওয়াকওয়ে এবং বিভিন্ন আকর্ষণের মাধ্যমে প্রতিদিনের জীবনকে রম্য করতের জন্য উপযুক্ত পরিসর তৈরি করা হয়েছে।

নরসুন্দা লেকসিটি শহরের জীবনের সৃষ্টি
নরসুন্দা লেকসিটির মৌলিক অংশ হচ্ছে নরসুন্দা নদী। এই নদীটি প্রায়ই কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণ হয়ে থাকে। এক সময়ে এই নদী ছিল নানা উপাখ্যানের সাক্ষী, এখানে পৌর নাগরিকদের জীবনের অবিস্মরণীয় সংগীত বাজত। এখানে নবজীবনের প্রথম প্রবাহ হয়েছিল, এখান থেকেই শহরের জীবনে নদী হয়ে উঠেছে খরস্রোতা। নরসুন্দা নদী হয়ে উঠা এই লেকসিটি এখন একটি আধুনিক এবং প্রজন্মের জনপ্রিয় বিনোদন ও প্রবাসী স্থান হয়ে উঠেছে।
নরসুন্দা লেকসিটির বৈশিষ্ট্য
১. দৃষ্টিন্দন সেতু
নরসুন্দা লেকসিটির একটি অমিলভূত বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন দৃষ্টিন্দন সেতু। প্রকল্পে ৫টি দৃষ্টিন্দন সেতু নির্মাণ হয়েছে, যা দুটি নদীর পাড়ে একসাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করছে। এই সেতুর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে যাওয়া সহজ হয়েছে এবং এখান থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
২. ফুট ওভারব্রিজ
প্রকল্পে ২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, যা নদীর উপরে হয়ে থাকলেও বিশেষ সৌন্দর্য্য দেখানোর জন্য একটি আকর্ষণ। এই ওভারব্রিজ দিয়ে পথচারীরা নদীর দুই পাড়ে সহজে পার হতে পারে এবং লেকসিটির অনুভূতি উপভোগ করতে পারে।
৩. ওয়াকওয়ে
নরসুন্দা লেকসিটির ওয়াকওয়ে সুপরিসর এবং সুস্থির ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসারণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এখানে প্রতিটি ব্যক্তির আদর্শ স্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। ওয়াকওয়ে একটি সুস্থ ও প্রশস্ত জীবনযাত্রার সূচনা করে, সুপরিসর ভাল রাখার জন্য নির্মিত হয়েছে এবং এখানে রমজানে হাঁটাচলা করার অপূর্ব সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

নরসুন্দা লেকসিটির আশেপাশের আকর্ষণ
১. গুরুদয়াল সরকারী কলেজ পুকুর প্রাঙ্গণ
গুরুদয়াল সরকারী কলেজের সামনে অবস্থিত পুকুর প্রাঙ্গণ একটি চমৎকার দৃশ্য রচনা করে। এই পুকুরে অবস্থিত নৌকা ভ্রমণ অত্যন্ত রম্যকর এবং দৃশ্য শোকের জন্য একটি নিরামিষ স্থান।
২. মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার
নরসুন্দা লেকসিটির হৃদয়ে অবস্থিত মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার সুস্থির জীবনের আনন্দে মৌলিক ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি বৃষ্টির জন্য পূর্বাভাসী এই স্থানগুলি স্থানীয় পৌরবাসীর জন্য একটি অদৃশ্য অস্তিত্ব।
৩. গুরুদয়াল কলেজ মাঠ
চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে আগতরা চাইলে গুরুদয়াল কলেজ মাঠে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কিংবা নরসুন্দা নদীতে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এই মাঠ একটি বিশেষ স্থান, যেখানে ক্রীড়া, বিনোদন, এবং সম্প্রাপ্ত শিক্ষা একসাথে অত্যন্ত উন্নত উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়।
৪. গুরুদয়াল সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণ
গুরুদয়াল সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণে বাস্তবায়ন হয়েছে একটি চমৎকার মুক্তমঞ্চ, যেটি প্রতিবার অনেক সাংস্কৃতিক ও চেতনা সৃষ্টি করে। এটি স্থানীয় পৌরবাসীদের দ্বারা অত্যন্ত পৌরসভায় গৌরবে অধিক। এই প্রাঙ্গণে হাঁটাচলা করে সময় কাটাতে প্রাঙ্গণের চারদিকে বিচিত্র দৃশ্য দেখা সম্ভব।
৫. গুরুদয়াল সেতু
গুরুদয়াল কলেজের পশ্চিম দিকে গৌরগঞ্জ সেতু নির্মাণ হয়েছে, যা নতুন মাত্রা যোগ করতে গৌরাঙ্গবাজার সেতুর পশ্চিম দিকে একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণ হচ্ছে। এই বিনোদন পার্কটি একটি আধুনিক স্থান, যেখানে বাচ্চাদের সাথে বাড়িতে বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে হয়।

কিভাবে যাবেন
কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের হারুয়া এলাকায় আধুনিক সদর হাসপাতালে কাছে গুরুদয়াল কলেজের অবস্থান। কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা বা ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে গুরুদয়াল কলেজ প্রাঙ্গণে মুক্তমঞ্চে আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ: কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ৩ টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। ট্রেনগুলো সকাল ৭ টা ৪০মিনিট, সকাল ১০ টা ২০ মিনিট এবং সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ক্ষেত্রে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে চড়লে হাতে অনেক সময় পাবেন। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০ টাকা এবং সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিট। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে মুক্তমঞ্চ আসতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা খরচ হবে। আর লোকালে খরচ হবে জনপ্রতি ১৫ টাকা।
ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ: ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার ইত্যাদি বাস ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচল করে। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জের বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়ায় সরাসরি মুক্তমঞ্চ যেতে পারবেন। এছাড়া বাস স্ট্যান্ড হতে লোকাল ইজিবাইকে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়ায় গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন বটতলা নামক স্থানে নামলেই নরসুন্দার তীরে গড়ে উঠা ওয়াচ টাওয়ার ও মুক্তমঞ্চ দেখতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
কিশোরগঞ্জ শহরে গাংচিল, তাজ, স্টার ওয়ান, ধানসিঁড়ি, ইস্টিকুটুম, দারুচিনি, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। মিষ্টি খেতে চাইলে একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার কিংবা গৌরাঙ্গবাজারের মদন গোপালে ঢু মারতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
রাতে থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোডে হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালাম সহ বেশকিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আছে পাগলা মসজিদ, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা, মিঠামইন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।