নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক, সুনামগঞ্জের একটি অবিস্মরণীয় পর্যটন স্থান, যা চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনির লাইম স্টোন খনির খনিকর্মস্থল হিসেবে পরিচিত। এই নীলাদ্রি লেক অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট নামক গ্রামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লেকটির আকর্ষণে অনেকে এটিকে বাংলার কাশ্মীর হিসাবে উল্লেখ করেন। এই নিবন্ধে আমরা নীলাদ্রি লেকের অদ্ভুত সৌন্দর্য, পর্যটনের সুযোগ, ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নীলাদ্রি লেক
নীলাদ্রি লেক

আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ:

নীলাদ্রি লেকের চমৎকার নীল পানি, ছোট বড় টিলা আর পাহাড়ের সমন্বয় এটিকে অপার্থিব সৌন্দর্যের অধিকারী করেছে। লেকের সুতরাং, অদ্ভুত সৌন্দর্য সম্পন্ন সানসেট দেখতে এখানে পর্যটকদের এক আদর্শ স্থান।

পর্যটনের সুযোগ:

নীলাদ্রি লেক একটি আশ্চর্যজনক পর্যটন স্থান যেখানে পর্যটকরা স্বতন্ত্রভাবে ভ্রমণ করতে পারেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আনন্দ নিতে পারেন। লেকে পানির উপরে ভাসমান নৌকা কিংবা রোমাঞ্চকর জাহাজে সঞ্চার করা, হাওয়ায় ভ্রমণ করা এবং সার্ফিং করা এই লেকের আকর্ষণীয় কাজগুলির মধ্যে অন্যতম।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:

নীলাদ্রি লেকের আশেপাশের অঞ্চলে স্থানীয় লোকেরা প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনের প্রকৃত ছবির অধিকারী। পর্যটকরা এখানে বিভিন্ন স্থানীয় উৎসব, পর্বত ও ঝর্ণা ভ্রমণ, এবং স্থানীয় খাবার স্বাদের মধ্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

নীলাদ্রি লেক: পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য

নীলাদ্রি লেক একটি অপরিসীম প্রাকৃতিক আকর্ষণ, যেখানে পর্যটকরা অদ্ভুত সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থান করতে পারেন। এখানে পর্যটকরা প্রাকৃতিক শান্তি অনুভব করতে পারেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিতি করতে পারেন। তাই, নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জে পর্যটকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় গন্তব্য।

নীলাদ্রি লেক
নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দুই রুটে নীলাদ্রি লেক দেখতে যেতে পারেন। নিজের সুবিধা মত যেকোন রুটে নীলাদ্রি লেকে যেতে পারেন।

রুট প্ল্যান – ১

প্রতিদিন ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহণের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহণের বাস। এসব নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকেট কাটতে ৮২০-৮৫০ টাকা লাগে আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগে। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন ব্রীজ এলাকায় টেকেরঘাট যাবার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া পাবেন। রিজার্ভ নিলে মোটরসাইকেল ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে.৪০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রা পথে যাদুকাটা নদী পার হওয়ার সময় জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলের জন্য ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

সুনামগঞ্জ (Sunamganj) থেকে মোটর সাইকেলে লাউড়ের গড় পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা। সেখান থেকে যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যাবার মোটর সাইকেল পাবেন। উল্লেখ্য, মোটরসাইকেল রিজার্ভ কিংবা ভাড়ার ক্ষেত্রে দুইজন ধরা হয়েছে।

রুট প্ল্যান – ২

ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামক দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন যথাক্রমে রাত ১০ টা ১৫ মিনিটে ও দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের অভিমুখে যাত্রা করে। এই ট্রেনে ১৮৫-৭৫৯ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়। মোহনগঞ্জ থেকে মধ্যনগর যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) থেকে বর্ষাকালে ট্রলার, স্পিডবোট বা নৌকা দিয়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। আবার নেত্রকোনা থেকেও সরাসরি নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। তবে শীতকালে নেত্রকোনা থেকে টেকেরঘাট যেতে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়।

রুট প্ল্যান – ৩

বর্ষাকালে আপনি ভিন্ন পথেও যেতে পারবেন। সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়ার হাওর হয়ে টেকেরঘাট যেতে পারবেন নৌকা নিয়ে। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে নিন। নৌকা ভাড়া করুন এইভাবে যে টাংগুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট যাবেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান (Shimul Garden), বারেক টিলা এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের দূরত্ব কাছাকাছি হওয়ায় আপনি চাইলে সময় ভাগ করে পছন্দের জায়গাগুলো দেখে ফেলতে পারবেন। সাধারনত বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ বেশি উপভোগ্য তাই বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর সহ নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা ভ্রমণ করতে ভ্রমণ গাইডের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ পরিকল্পনা দেখে নিতে পারেন।

এছাড়া শুকনা মৌসুমে কিংবা একদিনে নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী (Jadukata River), শিমুল বাগান, বারেক টিলা দেখতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর থেকে মোটর বাইক রিজার্ভ নিয়ে বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান হয়ে নীলাদ্রী লেক ঘুরে আবার সুনামগঞ্জ ফিরে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিজনভেদে মোটরবাইক ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং প্রতিটি বাইকে দুইজন ভ্রমণ করতে পারবেন।

অথবা আপনি যদি আলাদাভাবে উল্লেখিত স্থানগুলো ভ্রমণ করতে চান তবে সুনামগঞ্জ থেকে বাইকে ২০০ টাকা ভাড়ায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিটে লাউড়ের গড় পৌঁছে ছোট নৌকায় যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে সহজেই বারেক/বারিক্কা টিলায় যেতে পারবেন। আর বারেক টিলা থেকেই যাদুকাটা নদীর অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। বারেক টিলা থেকে শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক যাওয়ার বাইক ভাড়া করতে পারবেন। শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক একসাথে ভ্রমণের জন্য বাইক রিজার্ভ করতে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা লাগবে। উল্লেখ্য শিমুল বাগান ও নীলাদ্রী লেক দেখে সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে যেতে হলে আবার আপনাকে আবার একই পথে যাত্রা করতে হবে তাই দিনের শুরুতেই ভ্রমণে বের হলে স্বাচ্ছন্দে সবগুলো জায়গা দেখতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

বড়ছড়া বাজারে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ। এই সব গেস্ট হাউজে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। তাহিরপুর বাজারেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে আর যদি খালি থাকে তবে নীলাদ্রী লেকের কাছে পুরাতন চুনা পাথরের কারখানার গেস্ট হাউজে রাত কাটাতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

বারিক্কা টিলাতে সাধারন মানের দেশীয় খাবারের হোটেল রয়েছে। এছাড়া বড়ছড়া বাজার কিংবা যাদুকাটার পাশের টেকেরঘাটের ছোট বাজারে খাবার জন্য মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন। তবে ভাল মানের খাবার হোটেলের জন্য আপনাকে সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে।

নীলাদ্রি লেক
নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক ভ্রমণে জরুরী পরামর্শ

  • নীলাদ্রি লেকের গভীরতা অনেক বেশী হওয়ায় লেকের পানিতে নামতে বা সাতার কাটতে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
  • একদিনে সবগুলো জায়গা দেখতে সময়ের প্রতি যত্নবান হোন।
  • কেনাকাটার ক্ষেত্রে দরদাম করে নিন।
  • স্থানীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিন।

নীলাদ্রি লেকের কাছাকাছি আরো কিছু ভ্রমণের স্থান
– টেকের ঘাট
– বারিক্কা টিলা
– টাঙ্গুয়ার হাওর
– যাদুকাটা নদী
– শিমুল বাগান
– লাকমা ছড়া
– মেঘালয় পাহাড় সাইটসিং

সমাপ্তি

নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জের একটি অপরিসীম প্রাকৃতিক আকর্ষণ, যেখানে পর্যটকরা সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থান করতে পারেন। এখানে পর্যটকরা প্রাকৃতিক শান্তি অনুভব করতে পারেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিতি করতে পারেন। তাই, নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জে পর্যটকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় গন্তব্য। পর্যটকদের কাছে এই প্রাকৃতিক অপরিসীম প্রাকৃতিক আকর্ষণ উপভোগ করার জন্য নীলাদ্রি লেক একটি অদৃশ্য মুক্তির স্থান।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *