পাগলা মসজিদ

পাগলা মসজিদ

পাগলা মসজিদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত, একটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদ। এই মসজিদের পৃষ্ঠভূমি, একজন আধ্যাত্মিক সাধকের অদ্ভুত কাহিনীর মাধ্যমে রূপগ্রহণ করেছে এবং এটি ধীরে ধীরে একটি পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

পাগলা মসজিদ
পাগলা মসজিদ

পাগলা মসজিদের ঐতিহাসিক মৌলিক

পাগলা মসজিদের ঐতিহাসিক মৌলিক বলতে হলো সেই সময়টির একটি প্রাচীন সময়, যখন এই এলাকায় শক্তিশালী আধ্যাত্মিক গুরু নরসুন্দা নদীর তীরে আত্মসমর্পণে এসেছিলেন। প্রচুর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদটি একটি বিশাল জমির উপর অবস্থিত, এবং এর ঐতিহাসিক মৌলিকে তার ধর্মীয় মাধ্যমের মাধ্যমে বর্তমানের সময়ে প্রচুর ধার্মিক পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রণ করছে।

পাগলা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী

এই পাগলা মসজিদ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি অদ্ভুত স্থান। এর বর্তমান জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ, এবং এটি তিন তলা বিশিষ্ট, যেখানে ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান একটি মিনার রয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।

পাগলা মসজিদ
পাগলা মসজিদ

পাগলা মসজিদের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাগলা মসজিদের রয়েছে বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। এই মসজিদ একটি সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এবং মানুষজন বিশ্বাস করেন যে, এখানে দান করলে তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাসের কারণে পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রত করা হয়, এবং এর আয় অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়।

পাগলা মসজিদের আধুনিক প্রকল্প

বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীতে খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য পাগলা মসজিদ প্রতিদিন হাজির রয়েছে। দিনে এবং রাতে এই অসাধারণ ধার্মিক স্থানটি দেখতে চমৎকার লাগে, এবং এখানে পৌরাণিক এবং আধ্যাত্মিক উচ্চতা মেনে নিতে আগ্রহী বেশ কয়েক হাজার জন ভক্তদের প্রতিবারের মতো পাগলা মসজিদ আসতে দেখা যায়।

পাগলা মসজিদের সেবা এবং উন্নয়ন: পাগলা মসজিদের আয়ের একটা অংশ অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০০২ সালে মসজিদের পাশে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

পাগলা মসজিদ ও প্রকল্পগুলির সম্পর্ক: বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য দিনে ও রাতে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে।

পরিসংখ্যান:

  • মসজিদের জমি: ৩ একর ৮৮ শতাংশ
  • মুসল্লির ধারণক্ষমতা: সহস্ত্রাধিক
  • নারীদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা: রয়েছে

পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক অবদান: পাগলা মসজিদের আন্তর্জাতিক পরিসরে এই মসজিদ অত্যন্ত পরিচিত এবং এটি বিশ্বভরে বাঙালি মুসল্লির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

পাগলা মসজিদ
পাগলা মসজিদ

কিভাবে যাবেন


কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের গুরুদয়াল সরকারী কলেজ এবং আধুনিক সদর হাসপাতালে খুব কাছেই ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের অবস্থান। কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা বা ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে পাগলা মসজিদে যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ: কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ৩ টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। ট্রেনগুলো সকাল ৭ টা ৪০মিনিট, সকাল ১০ টা ২০ মিনিট এবং সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ক্ষেত্রে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে চড়লে হাতে অনেক সময় পাবেন। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০ টাকা এবং সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিট। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে পাগলা মসজিদ আসতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা খরচ হবে। আর লোকালে খরচ হবে জনপ্রতি ১৫ টাকা।

ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ: ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার ইত্যাদি বাস ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচল করে। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০-২৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় সরাসরি পাগলা মসজিদ যেতে পারবেন। এছাড়া বাস স্ট্যান্ড হতে লোকাল ইজিবাইকে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়ায় গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন বটতলা নামক স্থানে নেমে ৫ মিনিট হাটলেই পাগলা মসজিদে পৌঁছে যাবেন।

কোথায় খাবেন

কিশোরগঞ্জ শহরে গাংচিল, তাজ, স্টার ওয়ান, ধানসিঁড়ি, ইস্টিকুটুম, দারুচিনি, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। আর মিষ্টি পাগল হলে একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার কিংবা মদন গোপালে ঢু মারতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

রাত্রিযাপনের জন্য কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোডে হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালাম সহ বেশকিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা, মিঠামইন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।

সমাপ্তি

পাগলা মসজিদ, একটি ঐতিহাসিক এবং ধার্মিক স্থান, তার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক মৌলিক, এবং বৈশিষ্ট্যমূলক স্থাপত্যশৈলী দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। পাগলা মসজিদের এই নিখুঁত বিশাল আধ্যাত্মিক স্থানটি আমাদের ঐতিহাসিক এবং ধার্মিক পরম্পরায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচ্য।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *