বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ

গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়া গ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধটি (Mausoleum of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman) বাংলাদেশের একটি গৌরবময় স্মৃতিস্থল। এই সমাধি সৌধে স্মৃতিময় বাংলাদেশের প্রবাদপুরুষ, শেখ মুজিবুর রহমান, যার বিপ্লবী চিন্তা ও দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েছিলেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের ইতিহাস, স্থাপনা, আকৃতি, এবং কার্যক্রম।

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ

বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও অবদান:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের সন্তান হিসাবে তিনি সহজলভ্য কৃষি মাধ্যমে বড় হন। তাঁর সমর্থতার মধ্যে থেকেই বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিবল ও নেতৃত্বের জন্ম হল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি এক নেতা হিসেবে মানুষের সম্মেলনে উপস্থিত হন। এই যুদ্ধের পরিণামে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল, এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাষ্ট্রপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একাধিক কাজে মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেন। । তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সকল প্রতিষ্ঠান এবং বিপ্লবী আন্দোলনে অবদান রাখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তাঁর দীর্ঘ অবদানের পর তিনি নিহত হন। তাঁর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

সমাধি সৌধের নির্মাণ:

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের নির্মাণের প্রক্রিয়া ১৯৯৬ সালে শুরু হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই সমাধি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধি সৌধের উদ্বোধন করেন।

সমাধি সৌধের নকশা ও ভবনের নির্মাণ:

সমাধি সৌধের ভবন একটি প্রতিষ্ঠানের মতো গঠিত আছে। গ্রিক স্থাপত্য শিল্পরীতির ছোঁয়ায় লাল সিরামিকের ইট এবং সাদা-কালো টাইলস এই ভবনের আলোকপাত বৃদ্ধি করেছে। সমাধি সৌধের উপরে সাদা পাথরের তৈরী গোলাকার একটি গম্বুজ রয়েছে, যা একটি অত্যন্ত গৌরবময় দৃশ্য প্রদর্শন করে। এটির দেয়ালে জাফরি কাটা আছে, যা সূর্যের আলোর অভিসার বিষয়ক।

সমাধি সৌধের বিভিন্ন অংশ:

সমাধি সৌধের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, পাঠাগার, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর, উন্মুক্ত মঞ্চ, স্যুভেনির কর্নার, ফুলের বাগান এবং কৃত্রিম পাহাড়। এই বিভিন্ন অংশে সমাধি সৌধের সার্বিক প্রতীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি গর্ব অনুভব হয়।

পরিস্কার, নিরাপদ, এবং মানবিক উন্নতির প্রতীক হিসাবে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি একটি মহান স্মৃতির স্থল, যেখানে প্রতিটি বাংলাদেশী গর্বিত হতে পারেন।

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ

সমাধি সৌধে ভ্রমণ:

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে ভ্রমণ করতে গিয়ে মানুষ পৌঁছে বাংলাদেশের মহান ইতিহাসের একটি অংশে। এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মৌলিকতা উল্লেখ করে।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাস যোগে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার দুইটি রুট রয়েছে। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। আর গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাট হয়ে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। গাবতলী রুটে চলাচলকারী গোল্ডেন লাইন, কমফোর্ট লাইন, সেবা গ্রিন লাইন বাসের জনপ্রতি সীটের ভাড়া ৫০০ টাকা। গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী সেবা গ্রিস লাইন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও মধুমতী পরিবহনের বাসে প্রতিজন ৫০০-৭০০ টাকা ভাড়ায় টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়।

গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া: গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এবং পুলিশ লাইন মোড় থেকে ৩০ মিনিট বিরতিতে লোকাল বাস টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসের ভাড়া লাগে ৪০ টাকা। গোপালগঞ্জ সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধে যেতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া লাগে।

কোথায় থাকবেন

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকার জন্য হোটেল পলাশ, হোটেল রানা (02-6685172), হোটেল তাজ, হোটেল সোহাগ (0668-61740), হোটেল রিফাত এবং হোটেল শিমুল নামে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ধরণ এবং মান অনুযায়ী এসব হোটেলে রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া টুঙ্গিপাড়া থানা রোডে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মধুমতি নামের মোটেলে এসি ও ননএসি রুমে থাকতে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে এবং মধুমতি মোটেলের ডরমেটরিতে থাকতে হলে ২০০ টাকা গুনতে হবে। ফোন: 02-6656349, 01712-563227।

১। জেলা পরিষদ কটেজ, গোপালগঞ্জ। যোগাযোগ: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, ফোনঃ 0668-61204।
২। গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউজ: (নেজারত) ডেপুটি কালেক্টর, ফোনঃ 02-6685234, 02-6685565।

সারসংক্ষেপ:

বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং মর্মান্তিক স্থল। এই স্থলে বাংলাদেশের প্রবাদপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির সম্মিশ্রণ রয়েছে। তাঁর জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত তার জীবনযাপনের সকল মুহূর্ত এই স্থলের মাধ্যমে স্মরণীয় করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তার ব্যক্তিত্ব, কাজ, ও উৎকর্ষকে সঠিকভাবে উদ্বোধন করা। এই অদ্ভুত স্থল সমাধিসমৃতির মাধ্যমে আমাদের জীবনে এক নতুন আলোর অনুভূতি দেয়।

Similar Posts

  • জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি

    গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি একটি ঐতিহাসিক আবাসন। এই প্রাচীন ভবন নিয়ে সময়ের ধারায় অধিকাংশে নানাবিধ কথা ও স্মৃতি জুড়ে রয়েছে। জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেন এই বাড়িটি কত সালে নির্মাণ করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায়নি, কিন্তু এটি একটি ঐতিহাসিক ও সৌন্দর্যময় স্থান। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জমিদার গিরীশ…

  • লাল শাপলার বিল

    গোপালগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের একটি সুন্দর জায়গা যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পাটভূমির অনবদ্য সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে লাল শাপলার বিল নিজস্ব চর্চায় মূলত জমি ও প্রাকৃতিক উদ্ভিদের সৌন্দর্য্যের উপর কেন্দ্রিত করে তুলে ধরা হবে। গোপালগঞ্জের এই অসাধারণ প্রাকৃতিক অবলম্বনে একটি সুন্দর বিভিন্ন প্রকৃতিক বাগান, যা গোপালগঞ্জের অনেক রাঙানো শাপলার বিল সম্পর্কে আলোচনা করবে।…

  • মধুমতি বাওড়

    মধুমতি বাওড়: এক অলৌকিক নীলকণ্ঠ গভীরতা মধুমতি বাওড়, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার একটি অদ্ভুত স্থান। এই বাওড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাণিজ্যিক গুরুত্ব, এবং পর্যটন সম্প্রেক্ষে অনেকগুলো আকর্ষণীয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এই ব্যাপক লেখার মাধ্যমে আমরা মধুমতি বাওড়ের উৎপত্তি, অবস্থান, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, এর গুরুত্ব, এবং পর্যটন সম্প্রেক্ষে এর সম্পূর্ণ বিবরণ নিয়ে আলোচনা করব। মধুমতি বাওড়: এক…

  • শেখ রাসেল শিশু পার্ক

    শেখ রাসেল শিশু পার্ক গোপালগঞ্জ জেলায় টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত একটি পরিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। মধুমতী নদীর তীরে চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে নিয়ে গড়ে উঠা এই পার্কটি সব বয়সী মানুষকে সমানভাবে আকৃষ্ট করে। প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারনায় শেখ রাসেল শিশু পার্ক মুখর হয়ে উঠে। শেখ রাসেল শিশু পার্কের বিস্তারিত: প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত শেখ রাসেল শিশু পার্কে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *