বিছনাকান্দি
প্রাকৃতিক শান্তির উপজেলা: বিছনাকান্দি
বিছনাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি মূলত একটি পাথর কোয়ারী, যা জাফলং ও ভোলাগঞ্জের মতই উভয়পক্ষের সীমান্তের খাসিয়া পাহাড় থেকে আসা ধাপের মিলনে উত্তর দিকে অবস্থিত। এই অঞ্চলে সুউচ্চ মেঘালয়ের খাঁজে থাকা সুন্দর ঝর্ণা বিছনাকান্দিকে আরও আকর্ষণীয় করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অদ্ভুত সমন্বয়
বিছনাকান্দি একটি অদ্ভুত সমন্বয়ের উদাহরণ, যেখানে পাথরের কোয়ারীর উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা এবং শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি একসাথে মিলে এক অদৃশ্য মায়াজাল রচে। প্রথম দেখায় মনে হবে এটি এক পাথরের বিছানা, যেখানে প্রাণিরা স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতে পাবে মানসিক প্রশান্তি। বিছনাকান্দি একটি শান্তিপূর্ণ পর্যটক গ্রাম যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ মিলে যায়।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বিছনাকান্দি যে কোন সময়ে ভ্রমণের উপযুক্ত। তবে, বর্ষাকালে এই অঞ্চলের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখা যায়। বৃষ্টির পরে বিছানাকান্দি অধিক রমনীয় হয়ে উঠে এবং প্রচুর পানির প্রবাহের কারণে সবজান্তা খুলে উঠে। তবে, অন্য সময়ে পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণের সাথে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
পর্যটনের সুযোগ
বিছনাকান্দি প্রাকৃতিক শান্তির উপজেলা হিসাবে পরিচিত। এখানে প্রচুর পানির প্রবাহ, বৃষ্টির পরের প্রাকৃতিক আবৃত্তি এবং আশ্রয়ের উপযুক্ত স্থান রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নিঃশব্দ পরিবেশ এবং অপরূপ পাথরের জলধারা পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে বিছনাকান্দি ভ্রমণে।
স্থানীয় প্রাণী ও বন্য জীববিচার
বিছনাকান্দি একটি প্রাকৃতিক পর্যাবেশ, যেখানে স্থানীয় প্রাণী এবং বন্য জীববিচারের অনেক অপরূপ রয়েছে। আপনি এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং অন্যান্য জীবজন্তু দেখতে পাবেন। বিছনাকান্দি একটি স্বচ্ছ প্রদূষণ মুক্ত পর্যাবেশ, যেখানে প্রাণীরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে উচ্চতা প্রাপ্ত হয়।
সার্বিক ধারণা
বিছনাকান্দি একটি নিখুঁত পর্যটন স্পট যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক প্রাণী ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অদৃশ্য মিলে যায়। প্রচুর পানির প্রবাহ এবং অপরূপ জলধারা এখানে অনুভূতি আরো উন্নত করে দেয়। বিছনাকান্দি যে কোন সময়ে ভ্রমণের উপযুক্ত, তবে বৃষ্টির পরে এই স্থানের সৌন্দর্য অত্যন্ত চমকপ্রদ। তাই, যারা প্রাকৃতিক শান্তি এবং সৌন্দর্য অনুভব করতে ভালবাসেন, তাদের জন্য বিছনাকান্দি একটি আদর্শ গন্তব্য।
বিছনাকান্দি যাওয়ার উপায়
দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছনাকান্দি যাবার জন্যে। তারপর সিলেট থেকে বিছনাকান্দি যেতে হবে।
ঢাকা থেকে সিলেট যাবার উপায়
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা প্লেনে আপনি সিলেট যেতে পারবেন। ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, সৌদিয়া, এস আলম ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে। বাস ভেদে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ট্রেনে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্রেণিভেদে টিকেট মূল্য ৩,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাবার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুইটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।
সিলেট থেকে বিছনাকান্দি
বিছনাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকার মত লাগবে। হাদারপার এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দির মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন। । আর পান্থুমাই সহ নৌকা ভাড়া লাগবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আর অবশ্যই দামাদামি করে নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিবেন। বড় ট্রলার ভাড়া করতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেসময় আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেটে বা বাইকে চড়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। জনপ্রতি মটরবাইক ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
যেকোন ভাড়ার জন্যে ভালো মত দরদাম করে নিন। আর সিজন ও পর্যটক উপস্থিতি বেশি থাকলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে। কোন সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন – উপজেলা নির্বাহী অফিসার (01730-331036) এবং উপজেলা পরিষদ – (01919-515960)।
বিছনাকান্দিতে গোসল করলে পোষাক পরিবর্তনের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়।
কোথায় থাকবেন
বিছানাকান্দি যাওয়া আসার সময় কম লাগার কারণে থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন।
ভাল মানের আবাসি হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
কি খাবেন
বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে বিভিন্ন প্যাকেজে আনলিমিটেড ভাত ডাল খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে। প্রয়োজনে সাথে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে পারেন। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন, এই রেস্টুরেন্ট গুলো অনেক রকম ভর্তা ভাজি, খিচুড়ি ও মাংসের পদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা:
- খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
- চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে পারেবেন।
- নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
- বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
- দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
- স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
- সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।
সমাপ্তি
বিছনাকান্দি একটি নিখুঁত প্রাকৃতিক জগৎ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক প্রাণীর অনুভূতি সাক্ষাৎ করা যায়। এটি স্বচ্ছতা, শান্তি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সুন্দরতা একত্রিত করে প্রকৃতির অদৃশ্য শক্তির এক প্রতীক। বিছনাকান্দি ভ্রমণে এসে আপনি প্রাকৃতিক শান্তি এবং সৌন্দর্য অনুভব করতে পারবেন, যা আপনার মনে ভালো অনুভূতি এবং প্রাণের শান্তি উৎপন্ন করবে।
আমাদের সাথে ভ্রমণে এসে স্থানীয় প্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পরিচয় করুন। আমরা আপনার স্বাগত করতে সদাই আহ্বান জানাই।