লটকন বাগান
লটকন বাগান, নরসিংদী জেলার রুপরেখায় প্রস্থান করা এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। এই বাগানের জনপ্রিয়তা একমাত্র স্থানীয়দের নয়, বরং সারা বাংলাদেশের মানুষগুলোর মধ্যে এটি একটি প্রিয় লোকপ্রিয় গন্ধ। এখানে বৃষ্টির রাজা হিসেবে পরিচিত হওয়া লটকন বাগানের জড়ো অভিজ্ঞতা ও স্বাদের কারণে এখানে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক আসেন।
লটকন বাগানের অবস্থান
লটকন বাগান সত্তায়ি নরসিংদীর শিবপুর ও মরজাল উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে শিবপুর উপজেলার ছোটাবান্দা গ্রামের রাস্তার দুই পাশে অবশ্যই লটকন বাগানের পুকুরগুলো আপনার চোখে পড়বে। এখানে বাগানের গাছগুলো অদ্বিতীয়, শাখা-প্রশাখা ও উপশাখার জড়োতে ঝুলে থাকে অসংখ্য লটকন। প্রতি বছর হাজারো পাকা লটকন এখানে ফুটে উঠতে থাকে, যা স্থানীয় লোকদের হৃদয়ে স্থান করে।
লটকন বাগানে প্রবেশ করতে আপনাকে মালিকের অনুমতি নিতে হবে, তারপর আপনি নিজেদের হাতে গাছ থেকে পেড়ে লটকন খেতে পারবেন। এটি একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হতে পারে যদি আপনি লটকন বাগানে প্রথমবারে এসে থাকেন। অধিকাংশ বাগানের মালিক খুবই আন্তরিক এবং দর্শনার্থীদের আগ্রহ নিয়ে নিজেদের বাগান ঘুরে দেখায়, তাই তাদের সাথে কথা বলে নিজ হাতে গাছ থেকে পেড়ে লটকন খেতে পারবেন।
লটকন বাগান আকর্ষণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
লটকন বাগানে গিয়ে মানুষের মুখে হাসি বড় হয়ে উঠে, কারণ এখানে সমৃদ্ধির এক অসীম অধ্যায় রয়েছে। বাগানের গাছগুলো একে অপরের সাথে মেলে, সৃষ্টি করে একটি নৈসর্গিক ছায়ায়। গোড়া থেকে শুরু করে শাখা প্রশাখা, এখানে থাকে হাজারো পাকা লটকন। বাগানে বৃষ্টির পানি, উষ্ণতা এবং ভারপ্রাপ্ত উর্বর ভূমির সঙ্গে মিশে হয়েছে একটি রমনীয় পরিবেশ। এখানে বাগানের মালিকের সাথে কথা বলে নিজেদের হাতে গাছ থেকে পেড়ে লটকন খেতে পারবেন, এটি একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
- সমৃদ্ধির অসীম অধ্যায: লটকন বাগানে যখন মানুষ প্রবেশ করে, সেখানে অপেক্ষা করতে হয় অসীম সৌন্দর্যের। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবেগ প্রচুর। গোড়া থেকে শুরু হয়ে সৃষ্টি হয় একটি প্রাকৃতিক চিরসরণি, যেটি অত্যন্ত ভয়ানক এবং সৌন্দর্যময়।
- লটকন গাছ এবং পাকা লটকন: বাগানে অবস্থিত লটকন গাছ এবং তাদের সঙ্গে সহজলভ্য পাকা লটকনের সমৃদ্ধি দেখতে পাওয়া যায়। গাছের সুন্দর ফুল বাগানটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দেয়। ভারপ্রাপ্ত উর্বর ভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশে এই লটকন গাছগুলি ভালোভাবে ফলন করতে পারে।
- বৃষ্টির পানি এবং উষ্ণতা: বাগানে বৃষ্টির পানি এবং উষ্ণতা একটি অমিল মিশে হয়েছে, যা একটি আশ্রয়কর পরিবেশ সৃষ্টি করে। বৃষ্টির জলে গাছগুলি পুনর্জীবন পায় এবং বাগান একটি প্রাকৃতিক উদ্যানে পরিণত হয়ে থাকে।
- মালিকের সাথে কথা বলা: বাগানের মালিকের সাথে কথা বলে নিজেদের হাতে গাছ থেকে পেড়ে লটকন খেতে পারা একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এটি প্রকৃতির সাথে একটি মিলন অনুভূতি যোগাযোগ করে, লটকন বাগানের আরো আত্মীয়তা এবং বাগানের মৌলিক মানুষের সাথে একটি সাম্বর্ত্য সৃষ্টি করে।
- প্রাকৃতিক চিরসরণি: লটকন বাগান একটি প্রাকৃতিক চিরসরণি যা দৃশ্যমানভাবে একটি অদ্ভুত দৃশ্য তৈরি করে। গোড়া থেকে শুরু হয়ে সৃষ্টি হয় একটি রমনীয় প্রাকৃতিক চিরসরণি, যা অত্যন্ত ভয়ানক এবং সৌন্দর্যময়।
নরসিংদীতে অন্যান্য লটকন বাগান
লটকন বাগান নিজস্ব চরম সৌন্দর্যের সাথে প্রসিদ্ধ তারপরও, নরসিংদীতে অন্যান্য একাধিক স্থানে লটকন বাগান পাওয়া যায়। উয়ারি বটেশ্বর, রায়পুর, যশোর, আগরপুর, মাকাল্লা, ভিটিখৈনকুট, দক্ষিণ কামালপুর, নৌকাঘাটা, লালখারটেক, ভাঙ্গারটেক সহ আশেপাশের প্রায় সব গ্রামেই কম বেশি লটকন বাগান রয়েছে। এই অঞ্চলে গুলি গুলি বাগানের সৌন্দর্য বদ্ধ করে রেখেছে প্রাকৃতিক শোকের অবকাশ। প্রতিটি গ্রামের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই আপনি শহরের কাছাকাছি লটকন বাগানগুলো দেখিয়ে দিতে পারেন।
আর এই বাগানের আফতাব, লটকন বিক্রির হাটগুলি সহ অনেক স্থানে বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল বাজার, সৃস্টিগড় বাজার, শিবপুরের কামারটেক বাজার, চৈতন্য বাজার ও গাবতলী বাজারে প্রতি সপ্তাহের একটি দিন লটকন বিক্রির হাট বসে। এই হাটগুলিতে ইচ্ছে হলে আপনি লটকন বাজার ঘুরে দেখার সাথে সাথে দরদাম করে লটকন কিনে নিতে পারবেন। একে অপরকে ছাড়িয়ে লোকদের বাগান ঘুরতে এই হাটগুলি আপনার সমৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
লটকন বিক্রির হাট: বাজারে লটকন কেনার আগ্রহ
লটকন বাজার বসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল বাজার, সৃস্টিগড় বাজার, শিবপুরের কামারটেক বাজার, চৈতন্য বাজার ও গাবতলী বাজারে। এখানে লটকন বাগানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া পণ্যগুলি বিক্রি হয়, যা প্রাকৃতিক এবং স্বাদের মেলা। ইচ্ছে হলে লটকন বাজার ঘুরে দেখার সাথে সাথে দরদাম করে লটকন কিনে নিতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে নরসিংদী যাওয়া যায়। রাজধানীর গুলিস্থান, আব্দুল্লাপুর বা সায়েদাবাদ থেকে ঢাকা-সিলেট রোডে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসে কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে মরজাল বাস স্ট্যান্ড বা সৃষ্টিগড় নামতে হবে। মরজাল বা সৃস্টিগড় থেকে অটো বা রিকশা ভাড়া করে আশেপাশের লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। আর রেলপথে, ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে মহানগর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও এগারোসিন্দুর গোধূলির মতো ট্রেনে ১ ঘণ্টায় নরসিংদী যাওয়া যায়। নরদিংদী স্টেশন থেকে ভেলানগর বাস স্ট্যান্ড গিয়ে লেগুনা বা বাসে মরজাল বাস স্ট্যান্ড হয়ে অটোরিকশায় মরজাল ও উয়ারি বটেশ্বর এলাকার লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে নরসিংদী গিয়ে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন। তবে প্রয়োজনে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত ইব্রাহীম কটেজ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডির রেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় রাত্রিযাপন করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
নরসিংদী জেলায় ফাল্গুনি হোটেল, বাবুর্চি আলমগির হোটেল, বন্ধু হোটেল ও খোকন হোটেল সহ বিভিন্ন খাবার হোটেল রয়েছে। নরসিংদীর জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন ও শাহী জিলাপি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সুযোগ থাকলে ভেলানগরের সুস্বাদু মালাই চা স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন।
লটকন বাগান ভ্রমণ পরামর্শ
জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত লটকন বাগান দেখার উপযুক্ত সময়। জুলাইয়ের পর থেকে লটকন বাগানের সৌন্দর্য মলিন হতে থাকে।
কয়েকজন মিলে গ্রুপে মাইক্রো ভাড়া করে গেলে সৃষ্টিগড় হয়ে চৈতন্য, কুণ্ডপাড়া, নৌকা ঘাটা ও বেলাবোর লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে সুবিধা হবে।
বাগান মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন বাগানে ঢুকবেন না এবং ফল নষ্ট করবেন না।
সুবিধার জন্য যে অটো রিকশা ভাড়া করবেন সেই চালকের কোন পরিচিত লটকন বাগানে যেতে পারেন।
ফেরার পথে মরজাল বাজার থেকে লটকন কিনে উয়ারি বটেশ্বর দিয়ে বের হবেন।
নরসিংদী যাবার পথে পাঁচদোনায় নামবেন না। তাহলে বাড়তি ভোগান্তি হবে।
নরসিংদীর দর্শনীয় স্থান
নরসিংদীর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ী, বালাপুর জমিদার বাড়ী, উয়ারি বটেশ্বর ও ড্রিম হলিডে পার্ক ইত্যাদি অন্যতম।