শুভলং ঝর্ণা

শুভলং ঝর্ণা

রাঙ্গামাটি জেলা, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। এই জেলাতে পাওয়া যায় অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যেখানে সুন্দর পাহাড়, নদী, ঝর্ণা এবং বনঝরের চারপাশে ভিক্ষুকদের পর্যটন করা হয়। এই মধ্যে, শুভলং ঝর্ণা রাঙ্গামাটি সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

শুভলং ঝর্ণার বিশেষত্ব

বাংলাদেশের অন্যান্য ঝর্ণার মত শুভলং ঝর্ণাতেও শুকনো মৌসুমে পানি খুব কম থাকে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৪০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে বিপুল জলধারা কাপ্তাই লেকে আছড়ে পড়ে। শুভলং ঝর্ণা অত্যন্ত সুন্দর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সঙ্গে পরিপূর্ণ।

শুভলং ঝর্ণা
শুভলং ঝর্ণা

পর্যটকদের আকর্ষণ

শুভলং ঝর্ণার সৌন্দর্য্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। পাহাড়ের উপর থেকে পাথুরে মাটিতে ঝর্ণাধারা আছড়ে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। অতিরিক্ত কাপড় সাথে থাকলে ঝর্ণার শীতল পানিতে স্নান করে শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন। শুভলং ঝর্ণার কাছেই প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু ‘শুভলং পাহাড়’ বা ‘টি এন্ড টি পাহাড়’ রয়েছে। পাহাড় চূড়ায় রয়েছে সেনাক্যাম্প ও একটি টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার। পাহাড়ে ওঠার জন্য রয়েছে চমৎকার সিঁড়ি। পাহাড়ের উপর থেকে দেখলে মনে হবে সমস্ত রাঙ্গামাটি জেলা কাপ্তাই লেকের পানির উপর ভেসে আছে।

ভ্রমণের পথে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান

শুভলং ঝর্ণার অতিরিক্ত, রাঙ্গামাটির অন্যান্য প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় স্থানগুলির যেমন নীলগিরি, কাপ্তাই লেক, কাপ্তাই হিলস এবং বুদ্ধিস্ট মন্দির এখানে অত্যন্ত সুন্দর। এই অঞ্চলে ঘুরে আসা এক অপর অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

নিরাপত্তা সুবিধাগুলি

পর্যটকদের সুরক্ষা এবং তাদের সুবিধার দ্রষ্টব্য রাখার জন্য শুভলং ঝর্ণা এলাকায় অবস্থিত পুলিশ কমিশনারের দপ্তর রয়েছে। যাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও পরিসেবা প্রয়োজন, তারা এই অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

শুভলং ঝর্ণা
শুভলং ঝর্ণা

পরিষেবা ও অবস্থান

শুভলং ঝর্ণা অত্যন্ত সুন্দর একটি পর্যটন স্থল। এখানে পর্যটকদের জন্য অনেক হোটেল, রিসোর্ট এবং ভাসস্থান উপলব্ধ রয়েছে। পর্যটকরা এই অঞ্চলে অবস্থিত হোটেল বা রিসোর্টে বিশ্রাম নিতে পারেন এবং তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে সুখভোগ করতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা হতেঃ ঢাকার ফকিরাপুল মোড় ও সায়দাবাদে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টার রয়েছে। এই বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ৯ টা এবং রাত ৮ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১ টার মধ্যে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ঢাকা টু রাঙ্গামাটি এসি বাসের প্রতি সীট ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া সকল নন-এসি বাসের ভাড়া ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম হতেঃ চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙ্গামাটিগামী বিভিন্ন পরিবহণের লোকাল ও গেইটলক/ডাইরেক্ট বাস পাওয়া যায়। ভাড়া একটু বেশি হলেও গেইটলক বা ডাইরেক্ট বাসে উঠা উচিত। চট্টগ্রাম হতে রাঙ্গামাটি ডাইরেক্ট বাস ১৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

রাঙামাটির রিজার্ভ বাজারনথেকে শুভলং যাবার নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করুন। সারাদিনের জন্যে ভাড়া করলে শুভলং ঝর্ণা ছাড়াও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। এখানে সাধারণত নৌকার সাইজের উপর ভাড়া কম বেশি হয়ে থাকে। তবে মোটামুটি সাইজের একটা নৌকা ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে ভাড়া করা যায়। ১০-১৫ জন যাওয়া যায় এক নৌকাতে। শুভলং ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। লেকের মধ্যে দেখার মত আরো ৭-৮ টা জায়গা আছে। সময় থাকলে সবগুলো ঘুরে দেখে নিন। এছাড়া যদি ভ্রমণসঙ্গী এত জন না থাকে তাহলে রিজার্ভ বাজার থেকে জনপ্রতি প্যাকেজে ঘুরে আসতে পারবেন দর্শনীয় স্থানগুলো।

থাকা ও খাওয়া

শুভলং এলাকায় থাকা ও খাওয়ার জন্য কোন ভাল ব্যবস্থা নেই। তাই আপনাকে দিনে গিয়ে দিনেই রাঙ্গামাটি ফিরে আসতে হবে। প্রয়োজনে হালকা খাবার সাথে নিয়ে ভ্রমণ করুন। বোট নিয়ে যদি পেডা টিং টিং এ যান তাহলে সেখানে খেতে পারবেন।

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় লেকের কাছাকাছি হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন। তাহলে হোটেল থেকে কাপ্তাই লেকের পরিবেশ ও শান্ত বাতাস উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া কম খরচে থাকতে বোডিং এ যোগযোগ করতে পারেন। বোডিংগুলোতে থাকতে খরচ কম হলেও এগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। উল্লেখযোগ্য কিছু আবাসিক হোটেলের নামঃ

হোটেল গ্রিন ক্যাসেল : রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত এ হোটেলে নন-এসি সিঙ্গেল বেড, ডাবল বেড ও ত্রিপল বেডের রুমের ভাড়া যথাক্রমে ৮০০, ১০০০ ও ১২০০ টাকা। এসি কাপল বেড রুম পাবেন ১৬০০ টাকায় ও এসি ত্রিপল বেড রুম পাবেন ২০০০ টাকাইয়। যোগাযোগঃ ০১৭২৬৫১১৫৩২, ০১৮১৫৪৫৯১৪৬

পর্যটন মোটেল : রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশে অবস্থিত এ হোটেলটিতে নন-এসি ডাবল বেডের রুম পেতে ১০০০-১২০০ টাকা গুনতে হবে। আর এসি ডাবল বেড পাবেন ১৫০০-১৮০০ টাকায়। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬৩১২৬

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলায় আরো যেসমস্ত আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান রয়েছেঃ ঝুলন্ত ব্রিজ, কাপ্তাই লেক, ইকো পার্ক, উপজাতীয় জাদুঘর, ঝুম রেস্তোরা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, যমচুক, নির্বাণপুর বন ভাবনা কেন্দ্র, রাজবন বিহার, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজবাড়ি, পেদা টিং টিং, উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট, নৌ-বাহিনীর পিকনিক স্পট, রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু, ফুরমোন পাহাড়, সাজেক ভ্যালি, আর্যপুর ধর্মোজ্জ্বল বনবিহার, ডলুছড়ি জেতবন বিহার, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, কাট্টলী বিল ও ন-কাবা ছড়া ঝর্না ইত্যাদি

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

শুভলং ঝর্ণা একটি প্রাকৃতিক অদ্ভুত, তবে পর্যটকদের অনুশীলনে এবং পর্যটন অভিজ্ঞতার মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য অগ্রহায়িত হওয়া উচিত। স্থানীয় নীতিমালা এবং সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কবিজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ভ্রমণ সুরক্ষিত এবং আনন্দদায়ক হোক তার নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় পরিবেশের সাথে মিলিয়ে চলুন।

  • ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
  • শুভলং ঝর্ণার পূর্ণ রূপ দেখতে হলে বর্ষাকাল বা তার পরের সময়ে যান।
  • শীতকালে সাধারণত ঝর্ণায় খুব অল্প পানি থাকে।
  • একসাথে দলগত ভাবে গেলে খরচ কমে যাবে।
  • অফসিজনে ও ছুটির দিন ব্যাতিত গেলে খরচ কম হবে।
  • ট্রলার/বোট রিজার্ভ করার সময় কি দেখবেন কোথায় যাবেন ভালো মত বলে নিন।
  • রিজার্ভ করার সময় ঠিকমত দরদাম করে নিন।
  • লেকের কাছাকাছি কোন হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন।
  • কোথাও কোথাও লেকের পানির গভীরতা অনেক, নামতে চাইলে মাঝিকে জিজ্ঞেস করে নিন।
  • সাতার না জানলে সাথে লাইফ জ্যাকেট রাখুন।
  • একদিনেই কমন স্পট গুলো ঘুরে বেড়ানো যায়।
  • পরিবেশে ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় দয়া করে এমন কিছু করবেন না।
  • স্থানীয় মানুষদের সাথে শালীন আচরণ করুন।

সমাপ্তি

শুভলং ঝর্ণা একটি আদর্শ পর্যটন স্থল যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুখরিত হোক। এটি প্রাকৃতিক পর্যটকদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, সার্থক এবং সুন্দর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। তাই, পরবর্তী ভ্রমণের সময়ে অবশ্যই এই নির্দেশিকা অনুসরণ করুন এবং রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক অদ্ভুতের আনন্দ নিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *