সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।

সেন্টমার্টিন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গ

সেন্টমার্টিন একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। এখানে নীল সমুদ্র এবং নিস্তব্ধ পানির জলধারা একাধিক দিকে ছড়িয়ে আছে। অবিস্মরণীয় সূর্যাস্তের দৃশ্য, সারি সারি নারিকেল গাছের ঝর্নাধারা, পানির তাল আর সাদা সাদা সৈকতের মাঝে আমরা বেড়াচ্ছি। এখানে আসলে মানুষের হাত কাটলে, কোনো যন্ত্রণা বা কাস্টারত নেই। প্রকৃতি এখানে যেখানেই তার কাছাকাছি, সেন্টমার্টিনে আপনার সাথে রয়েছে নির্মলতা ও শান্তির অভাবশ্যকতা।

সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিনে গন্তব্যের ভার্সন

এখন একটু কথা বলা যাক সেন্টমার্টিনে কিভাবে গন্তব্যের ভার্সন পাওয়া যায়। এটি আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পর্যটনের অনুভুতি এবং মজার সময় পাওয়ার জন্য একটি অত্যন্ত আদর্শ স্থান। প্রথমেই, এই দ্বীপে আপনি প্রাকৃতিক রুচির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সারি সারি নারিকেল গাছ এবং সমুদ্রের ঝর্নাধারা আপনার মনকে শান্ত করে দেবে। দ্বীপে থাকা আদর্শ পরিবেশে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্মল বাতাসের সুবিধা পাবেন।

সেন্টমার্টিনের বাস্তবিকতা

সেন্টমার্টিন একটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাকৃতিক দ্বীপ যা উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অনেক আকর্ষনীয় প্রাকৃতিক স্থানের সঙ্গে অভিযোগ করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ অত্যন্ত সুন্দর একটি দ্বীপ যা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সীমান্তে অবস্থিত। সেন্টমার্টিন একটি মহান দ্বীপ যা সুন্দর সমুদ্র এবং নীল আকাশের সাথে ঘনিষ্ঠ।

সেন্টমার্টিনে যে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়

সেন্টমার্টিনে যাওয়া আপনার জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এখানে কোনো অবাঞ্ছিত সময় বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান নেই। আপনি চাইলে এখানে যেতে পারেন এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন। এই অনুষ্ঠানে থাকা আপনার কাছাকাছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভাবশ্যকতা প্রাকৃতিক এবং মজার অনুভুতি এবং মজার সময় বিশেষ।

সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিনে কোথায় থাকবেন

সেন্টমার্টিন একটি অদ্ভুত স্থান যেখানে বেশিরভাগ মানুষ ঘুরতে এসেছে এবং প্রচুর সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। যদিও এই দ্বীপে বেশিরভাগ অত্যন্ত শান্ত এবং অবিশ্বাস্য সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে তবে আপনি সেন্টমার্টিনে আপনার ভালো থাকার জন্য আদর্শ অবস্থান নির্বাচন করতে পারেন। যেমন, আপনি সেন্টমার্টিন এর সমুদ্র সৈকতে হাঁটা শুরু করতে পারেন এবং এখানে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে আপনার স্বাদ উঠাতে পারেন।

সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়

সেন্টমার্টিন যাবার বেশিরভাগ শীপ টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। তাই সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ চলে যাওয়া সুবিধাজনক। টেকনাফ থেকে জাহাজে অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। কক্সবাজার ভ্রমণ পরিকল্পনায় থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। অথবা কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস শীপে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকেও সেন্টমার্টিন যাবার এমভি বে ওয়ান শীপ চালু হয়েছে। সেন্টমার্টিন যাওয়ার সাম্ভাব্য সকল উপায় নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো।

ঢাকা থেকে টেকনাফ যাবার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও আবদুল্লাহপুর থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সেন্টমার্টিন হুন্দাই, রয়েল কোচ, তুবা লাইন, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ভাড়া সাধারণত বাস ও ক্লাস অনুযায়ী ১১০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। যদি শুধু সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টেকনাফ চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। রাত ৮-১০ টার মধ্যে বাস রওনা দিয়ে সকাল ৮টার মধ্যে টেকনাফ পৌঁছে যায়।

সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ যাবার উপায়

ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভেদে ভাড়া সাধারণত ১২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করতে পারেন।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ : কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস/মাইক্রো/জিপ/সিএনজি ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। কক্সবাজার হতে টেকনাফ যাওয়ার বাস ভাড়া ১৫০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। টেকনাফ যেতে অবস্থা ভেদে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। আর সকালের জাহাজ ধরতে চাইলে কক্সবাজার থেকে ভোরে (৬টার মধ্যে) টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যাবার উপায়

চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিএসই গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ বাসে যেতে খরচ হবে ৫৮০-১২০০ টাকা।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাবার উপায়

সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজ/শীপ আসা যাওয়া করে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী শীপের মধ্যে আছে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রজ এন্ড ডাইন, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক ইত্যাদ। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা।

সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল এই পাঁচ মাস জাহাজ চলে। অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীত মৌসূম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই সময়ে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। টেকনাফ নামারবাজার ব্রিজ বা জেটি ঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোট ও মালবাহী ট্রলার ছাড়ে। ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাবার ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। এটা সিজন ও যাত্রীভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। ট্রলারে বা স্পিডবোটে গেলে অনেক রোলিং হয়, তাই শীপে যাওয়াটাই ভালো উপায়।

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট ও হোটেল

সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য নানান মানের রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ রয়েছে। ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া সুবিধাজনক। তবে চাইলে সেখানে গিয়েও পছন্দমত রিসোর্ট ঠিক করতে পারবেন। সেন্টমার্টিনের জনপ্রিয় রিসোর্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে –

ব্লু মেরিন রিসোর্ট : সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরি ঘাটের খুব কাছেই ব্লু মেরিন রিসোর্টের অবস্থান। ব্ল–মেরিন রিসোর্টের এসিযুক্ত ডাবল বেডরুমের ভাড়া ১৫০০০ টাকা এবং নন-এসি ৫০০০ টাকা, ট্রিপল রেডরুমের প্রতিটির ভাড়া ৩০০০ টাকা, ছয়জনের বেডরুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং দশজনের বেডরুমের ভাড়া ৫০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01713399000

প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট : সেন্টমার্টিন বাজারের ভেতর দিয়ে ব্লু মেরিন রিসোর্ট পার হয়ে আরো কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে সুদৃশ্য প্রাসাদ প্যারাডাইস। বিভিন্ন ধরনের ১৬টি রুমের যেকোন একটি ভাড়া নিতে খরচ করতে হবে ২০০০-৫০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01556347711, 01995 539248, 01883 626003

নীল দিগন্তে রিসোর্ট : সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচের কোণাপাড়ায় অবস্থিত নীল দিগন্তে রিসোর্টটি জেটি থেকে বেশখানিকটা দূরে অবস্থিত। নীল দিগন্তে রিসোর্টের নানা ধরণের কটেজ টাইপ রুমে থাকতে খরচ হবে ১৫০০-৫০০০টাকা। যোগাযোগঃ 01730051005, 01730051009

সেন্টমার্টিনে কোথায় খাবেন

সাধারণত বেশিরভাগ রিসোর্টেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। আপনি যে রিসোর্টে থাকবেন সেখানে খাবার ব্যবস্থা আছে কিনা আগে জেনে নিন। সামুদ্রিক মাছের নানা পদের সাথে বাংলা খাবারের আয়োজন থাকে প্রায় সব জায়গাতেই। রিসোর্ট গুলোতেই থাকে বারবিকিউ এর ব্যবস্থা। সেন্টমার্টিন বাজারে কাছে বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। চাইলে সে গুলো থেকেও খাবার খেতে পারবেন। যদি রাতে না থেকে দিনে দিনে ফিরতে চান সেই ক্ষেত্রের বাজারের হোটেল গুলোতেই খাবার পাবেন।

যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁতে গিয়ে খেতে পারেন তার কয়েকটি হল কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ, বিচ পয়েন্ট, হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরাঁ, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি। তবে অবশ্যই খাবার ও দাম একটু যাচাই করে নিবেন।

সেন্টমার্টিনে কি খাবেন

সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জিনিস হল ডাব যা একাধারে মিষ্টি ও সুস্বাদু। সেন্টমার্টিনে গেলে অন্তত একটা ডাব টেস্ট করা উচিত। যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেন্টমার্টিন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের ও স্বাদের বাহার নিয়ে অপেক্ষা করছে। নিজের মত করে মাছ পছন্দ করে কিনে বারবিকিউ করার সুযোগ থাকে সব রিসোর্ট ও হোটেলেই। আর যদি সুযোগ হয় তবে কুরা খেয়ে দেখতে পারেন (দেশী মুরগিকে কুরা বলে ডাকা হয়)। এখানে আরো রয়েছে অফুরন্ত লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি ইত্যাদি জানাঅজানা শুঁটকি মাছের ভান্ডার। এছাড়া গরমের সময় গেলে সেখানের তরমুজ খেয়ে দেখতে পারেন।

কি করবেন ও কি দেখবেন

যারা দিনে গিয়ে দিনেই সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন তারা পরবর্তীতে আফসোস করতে পারেন তাই সবচেয়ে ভালো হয় অন্তত একদিন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করা। এতে যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে।

ডে লং ট্রিপ:

যারা সময়ের অভাবে ডে লং ট্রিপে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে সময় নষ্ট না করে ভ্যান নিয়ে সরাসরি চলে আসুন পশ্চিম বীচ বা মেইন বীচে। এর জন্য আপনাকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভ্যান ভাড়া গুণতে হবে। এখানে হেঁটে আসতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে তবুও ডে লং ট্রিপে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। এই জায়গাটা পানিতে নামার জন্য ভালো তাই বীচে এসে চাইলে সচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে পারেন। যাই করেন না কেন অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনাকে ২ টার আগে ফ্রি হতে হবে নইলে খাওয়ার সময়টুকুও পাবেন না।

১ রাত ২ দিনের প্ল্যান: যারা এক দিনের প্ল্যান নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসবেন তারা জাহাজ থেকে নেমে হোটেলে উঠে পড়ুন। দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা বিশ্রাম নিয়ে চলে আসতে পারেন ছেঁড়া দ্বীপ। চেষ্টা করবেন ৪ টার আগে আগেই রওনা দিতে তাহলে ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখে ফিরতে পারবেন। ছেঁড়া দ্বীপের সূর্যাস্ত অসাধারণ তবে সূর্যাস্তের পরে বেশি দেরি করবেন না। সন্ধ্যায় মূল দ্বীপে ফিরে বাজারের জেটিতে আড্ডা দিতে পারেন কিংবা পশ্চিম বীচের যে কোন জায়গায় বসাতে পারেন গানের আসর। রাতে বার-বি-কিউ করার ক্ষেত্রে রিসোর্টে করতে পারেন। রিসোর্টে মাছের দাম একটু বেশি নিলেও মাছগুলো ফ্রেশ থাকে।

আপনার সেন্টমার্টিন ট্যুর প্ল্যান কিভাবে সাজাবেন তার আরও বিস্তারিত তথ্য পাবেন আমাদের সেন্টমার্টিন ট্যুর প্ল্যান গাইডে।

সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খরচ

যে কোন ভ্রমণে খরচ কত হবে তা সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ও কি করবেন সেইসব বিষয়ের সাথে কোন সময় যাচ্ছেন তার উপরেও খরচ নির্ভর করে। পিক সিজন (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) বা ছুটির দিন গুলোতে থাকা খাওয়া সহ অন্যান্য খরচ একটু বেশিই হবে। কম খরচে ও মোটামুটি মানের হোটেলে ১ রাত থাকা ও খাওয়া সহ ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কত খরচ হবে তার একটা ধারণা দেবার জন্যে খরচের তালিকা দেওয়া হলো। যা থেকে আপনি কিছুটা হলেও খরচ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।

যাতায়াত খরচ
বাসের টিকেট – যাওয়া ও আসা সহ ২৪০০ টাকা (নন এসি), ৩,২০০-৪,৪০০ টাকা (এসি)।
শিপ/জাহাজ ভাড়া – যাওয়া ও আসা সহ ৮৫০ টাকা (ওপেন ডেক), ১১০০-১৬০০ টাকা (এসি)।
ছেড়া দ্বীপ – ট্রলারে যাওয়া আসা ২০০ টাকা।
লোকাল যাতায়াত – সেন্টমার্টিনের বাজারে কিংবা আশেপাশে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ – ২০০টাকা।

খাবার খরচ
যাত্রার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।
১ম দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা ও রাতের খাবার/বার বি কিউ ২০০-৩০০ টাকা।
২য় দিন – নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২২০ টাকা।
ফিরে আসার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০-২০০ টাকা।

চাইলে আরও কম খরচে খাওয়া দাওয়া করা সম্ভব। বাজারের ভিতরের দিকে হোটেল গুলোতে গিয়ে সাধারণ খাবার খেলে খরচ অনেক কমে যাবে।

থাকার খরচ
স্ট্যান্ডার্ড হোটেল/রিসোর্ট কাপল রুম বা ডাবল বেড ১৫০০-৩০০০ টাকা। বাজারের দিকে মোটামুটি মানের হোটেল ৮০০-১২০০ টাকা। খুবই পিক সিজন আর সরকারি ছুটির দিনে ভাড়া আরও একটু বেড়ে যাবে। এক রুমে কয়েকজন মিলে থাকলে খরচ ভাগ হয়ে কমে যাবে। পিক সিজন ও ছুটির দিন ছাড়া গেলে খরচ আরও কম হবে। এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে অল্প টাকায় থাকতে পারবেন, এ জন্যে একটু খুঁজে ও কথা বলে দেখতে হবে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ

বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সি সিজনের সময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ অফার করে। ভ্রমণ প্যাকেজ গুলো সাধারণত সেন্টমার্টিন ১ রাত বা ২ রাত থাকা, যাওয়া আসার খরচ, খাবার খরচ সহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ নির্ভর করে কোন মানের জাহাজে যাওয়া আসা হবে, কেমন মানের রিসোর্টে রাখবে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার উপর। সাধারণত ট্যুর এজেন্সির প্যাকেজ প্রাইস গুলো ঢাকা থেকে যাওয়া আসা সহ জনপ্রতি ৫,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা:

  • সেন্টমার্টিন আমাদের দেশের সম্পদ, তাই প্রকৃতির ক্ষতি হয়ে এমন কিছু করবেন না
  • সেন্টমার্টিনে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকে। কথা বলতে সমস্যা হতে পারে। তবে টেলিটক তুলনামূলক ভাল কাজ করে
  • বর্তমানে নিয়মিতভাবে সেন্টমার্টিনে বিজিবি টহল দেয়৷ তারা অনেক সময় রাত ১২টার পর পর্যটকদেরকে বীচ বা জেটি এলাকায় থাকতে নিষেধ করে
  • সঠিক জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলবেন। দয়া করে প্লাস্টিক/পলিথিন কিছু সৈকতে ফেলে আসবেন না
  • কম খরচে সেন্টমার্টিন থাকা ও খাওয়ার জন্যে ছুটির দিন গুলোতে না গিয়ে অন্যান্য দিনে যেতে পারেন
  • বর্তমানে সেন্টমার্টিনে অনেক হোটেল ও কটেজ গড়ে উঠেছে, থাকার জায়গায়র অভাব তেমন হয় না
    পর্যটন এলাকায় যে কোন কিছুর জন্যে দরদাম করবেন কেনাকাটায় মানুষ বেশি হলে আগেই শিপের টিকেট কেটে রাখতে পারেন
  • সেন্ট মার্টিন যাওয়া আসার সময় জাহাজের ডেক থেকেই সবচেয়ে সুন্দর ভিউ দেখতে পাবেন
  • সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন

সমাপ্তি:

সেন্টমার্টিন একটি অদ্ভুত দ্বীপ যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনবদ্য আস্থা আছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সেন্টমার্টিনে ঘুরে আসার পর মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ার একটি অদম্য সৌন্দর্য সম্পর্কে বোঝা যায়। এখানে আসলে প্রাকৃতিক রুচির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভাবশ্যকতা পেয়ে যাবেন। সেন্টমার্টিনে ঘুরে আসুন এবং আপনার জীবনে অদম্য অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *