সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প বন, একটি অদ্বিতীয় স্থান যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বন্য জীবনের আদৃশ সমন্বয় পাওয়া যায়। এই অদ্বিতীয় স্থানটি প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্য জীবন, এবং এর মোহাকর রহস্যময় বাতাস করে আসা পর্যটকদের একটি অপার অভিজ্ঞতা অনুভব করার সুযোগ প্রদান করে।

রাতারগুল একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট:

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের অন্যতম নীলগিরি হিসেবে পরিচিত। এই স্থানটি অদ্বিতীয় মনোরম সৌন্দর্যের সাথে বিশিষ্ট একটি বন্য অঞ্চল। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন ধরনের বন্য জীবনের দৃশ্য পাওয়া যায়। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের পর্যটক অভিজ্ঞতা এক বার পাওয়া হলে তা ভুলতে অসম্ভব।

সোয়াম্প ফরেস্ট
সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুলের অন্যতম অসাধারণ বৈশিষ্ট্য:

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের অন্যতম অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি বর্ষাকালে পানিতে মেলা যায়। বর্ষা ঋতুতে এই অঞ্চলটি একটি অদ্ভুত দৃশ্যের মধ্যে পরিণত হয়ে যায়। জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো এক অদ্ভুত দৃশ্য উপস্থাপন করে, যা প্রচুর পর্যটকদের আকর্ষিত করে। এই পর্যটক দুর্দান্ত সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসার ইচ্ছে অনেকের মনে হতে পারে।

রাতারগুলে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা:

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা অনেকটাই আলাদা। বিভিন্ন ধরনের পাখি, বন্যপ্রাণী, এবং সোয়াম্পে লাইফ উপস্থিতির মধ্যে পর্যটকরা একটি অদ্বিতীয় জীবনযাত্রা অনুভব করে। এছাড়াও, বর্ষায় এই অঞ্চলে প্রাণী ও পাখির মেলা আয়োজিত হয়, যা অনেকের আকর্ষণ পাওয়ার কারণ হতে পারে। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসাবে গণ্য।

রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য:

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের জীববৈচিত্র্য একটি অদ্ভুত বিষয়। এখানে বাগানিভুক্ত বন্য জীবনের উপস্থিতি অনুভব করা যায়, যা প্রাকৃতিক বাগানের মত প্রতিফলন দেয়। রাতারগুলে সাধারণত হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখা যায়, যেগুলো এই বনের প্রধান জীবজন্তু সমৃদ্ধ বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়াও, রাতারগুলে প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা পাওয়া যায়, যা এই স্থানকে আরও অদ্ভুত এবং আকর্ষণীয় করে।

সোয়াম্প ফরেস্ট
সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুলে বন্য জীবন:

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য জীবন অনুভব করা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রচুর পরিমাণে জলাশয়ের উপস্থিতি কারণে এখানে বেশ কিছু বন্য প্রাণী ও পাখি অবাসিত হয়ে থাকে। বর্ষায় বনের গাছের ডালে পাখিরা অধিকাংশই অবস্থান নেয় এবং সেই সময় বন্যপ্রাণীরা এখানে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও, শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা আরও এই বনের অনুভুতি সমৃদ্ধ করে।

যেভাবে রাতারগুল যাবেন

ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা প্রভৃতি পরিবহনের এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য বাস ভেদে ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ঢাকা থেকে সিলেট ট্রেন টিকেট ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ৩২০ থেকে ৭৩৬ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম থেকেও ট্রেনে সিলেট যেতে পারবেন, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান ঢাকা-সিলেট আকাশপথে চলাচল করে।

সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়

সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তাই সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। একসাথে কয়েকজন হলে সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা লেগুনা ভাড়া করে নিতে পারেন। সারাদিনের জন্যে ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা লাগবে। আপনি চাইলে রাতারগুলের সাথে ভোলাগঞ্জ অথবা বিছনাকান্দি ঘুরে দেখতে পারেন। সিএনজি রিজার্ভ করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। রাতারগুল ঢুকার জন্যে সরকারি ফি দিতে হয় এবং জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৫ জন বসা যায়। নৌকার ভাড়া ৭৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

ভালো সার্ভিসের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল, ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

সোয়াম্প ফরেস্ট
সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল ভ্রমণে সাবধানতা

বর্ষায় বন ডুবে যাওয়ার পর সাপ সাধারণত বিভিন্ন গাছের ডালে আশ্রয় নেয়, এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। যদি সাঁতার জানা না থাকে তবে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। প্রয়ো

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *