কাপ্তাই লেক

কাপ্তাই লেক

কাপ্তাই লেক বুকে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা। আর কাপ্তাই উপজেলা অনন্য পাহাড়, লেকের অথৈ জলরাশি এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে। ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ। এখানে চোখে পড়ে ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের মিতালী। একদিকে যেমন পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্ভার তেমনি লেকের অথৈ জলে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জল কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মূহুর্ত। কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার সমস্ত রুপে উজাড় করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে।


কাপ্তাই লেকের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের প্রশস্ত হ্রদপ্রদ্বীপ এবং বিশ্বের অন্যতম রম্য জায়গা হিসেবে পরিচিত। এটি রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। এই হ্রদটি একটি সুন্দর দৃশ্য যা অপার সৌন্দর্যের সাথে পরিপূর্ণ। এখানে পাওয়া যায় প্রাকৃতিক উদ্ভিদ, প্রাণী, সান্নিধ্যবান পাহাড় আর অধ্যাত্মিক পরিবেশ। লেকের আশেপাশে পাখির গান, ঝর্ণার ধ্বনি আর প্রাকৃতিক অবস্থানের শান্তি মনোহর অভিজ্ঞতা করা যায়।

কাপ্তাই লেকের ঐতিহাসিক নির্মাণ

১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারণ দেখা গেল। সেই সময়ে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নতুন একটি প্রকল্প আরম্ভ করা হলো, যা রাঙামাটি জেলার একটি অপূর্ব পরিবেশের উন্নতির সৃষ্টি করতে উদ্দীপ্ত করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণ পরিকল্পনা করা হলো।

কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণের লক্ষ্য ছিল নদীর জল উৎপাদন ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের অগ্রগতিতে অবদান রাখা। এই লক্ষ্যে পাকিস্তানের সরকার আমেরিকার সাথে সমঝোতা করে কাপ্তাই নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করার নিষেধাজ্ঞা দিলো।

১৯৫৬ সালে কাপ্তাই নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়। এই বাঁধের নির্মাণে একাধিক নদী ও নদীর ধারার প্রভাবে বিপর্যয় হয়েছিল। এটি ফলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে এই কাপ্তাই লেকের সৃষ্টি হয়।

কাপ্তাই লেক
কাপ্তাই লেক

লেকের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য

কাপ্তাই লেকের সবচেয়ে চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো তার প্রাকৃতিক বাস্তবতা। এখানে পাওয়া যাওয়া উদ্ভিদ-প্রাণীর বিভিন্নতা মনোহর। লেকের জলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, যারা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য বোঝাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, লেকের চারপাশে প্রাণী প্রতিরক্ষা করার জন্য নির্মিত কঠোর আইন বিধান আছে, যা বিশেষ ভাবে পাখি ও প্রাণীদের সুরক্ষিত করে রক্ষা করে।

সম্পর্কিত পর্যটক স্পট

কাপ্তাই লেক পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অপর্যত্নিত পর্যটক স্পটের মধ্যে একটি। কাপ্তাই লেকের চারপাশে অনেক হোটেল, রিসোর্ট আর পার্কিং সুবিধা রয়েছে যেগুলো পর্যটকদের কাপ্তাই লেকের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করে। এছাড়াও, লেক সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্রীড়া ও প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়, যেগুলো পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।

কি দেখবেন

প্রকৃতি প্রেমিরা বোট বা নৌকা ভাড়া করে লেকের জলে ভাসতে ভাসতে চারপাশটা দেখে নিতে পারেন। পাহাড় থেকে লেকের সৌন্দর্য দেখতে কাপ্তাই লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। দল বেঁধে নৌ বিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে লেক ভ্রমণ করার সুযোগও রয়েছে এখানে। এছাড়া স্পিডবোট/নৌকা রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখার পাশাপাশি রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি শহর সহ আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। কাপ্তাইয়ের কাছেই কর্ণফুলি নদীতে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে। চাইলে সেই অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন। ক্যাবল কারের চড়ার মজা নিতে চাইলে যাবেন শেখ রাসেল ইকোপার্কে।

কাপ্তাই লেক কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর থেকে বিভিন্ন মানের বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই যাওয়া যায় এক্ষেত্রে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। এসব বাসে যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৭৮০-৮০০ টাকা। এছাড়া আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকেও কাপ্তাই যেতে পারেন। বদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর কাপ্তায়ের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ৮০-১২০ টাকা। সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম এসে বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকেও কাপ্তাই যেতে পারবেন।

বান্দরবান থেকে কাপ্তাই যেতে চাইলে রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটি গামী বাসে করে গিয়ে বড়ইছড়ি নেমে সিএনজি দিয়ে কাপ্তাই যেতে পারবেন। রাঙ্গামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে কিংবা সিএনজিতে অথবা ট্রলার নৌকায় কাপ্তাই লেক হয়ে কাপ্তাই বাজার যাওয়া যায়।

কাপ্তাই লেক
কাপ্তাই লেক

কি খাবেন

কাপ্তাই লেকে মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে চাইলে সেখান থেকে দুপুর কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে নিতে পারেন। কাপ্তাই এর কাছে আছে বেরাইন্যে লেক শোর ক্যাফে, জুম রেস্তোরা, প্যারাডাইস ক্যাফে ইত্যাদি। কিংবা নিজের পছন্দের খাবার খেতে ঘুরে আসতে পারেন নৌবাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন ভাসমান রেস্টুরেন্ট থেকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে।

কোথায় থাকবেন

কাপ্তাইয়ে রাত্রি যাপনের জন্য এখনো তেমন ভালো মানের বাণিজ্যিক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেনি। তাই রাত কাটানোর ইচ্ছা থাকলে আগে থেকেই কাপ্তাইয়ের সরকারি রেস্ট হাউস কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আসা উত্তম। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউসগুলোতে কম খরচে রাত্রি যাপন করা যায়। লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পটেও রাত্রী যাপনের সুযোগ রয়েছে তবে এজন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হতে পারে। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই এর কাছে হওয়ায় কিংবা আপনার ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই হলে রাঙ্গামাটি থাকতে পারেন।

আপনার সুবিধার্থে রাঙ্গামাটিতে থাকার হোটেল, মোটেল ও রেস্টহাউজগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

হোটেল গোল্ডেন হিল : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 01820-304714
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 61200
হোটেল লেক ভিউ : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 62063
হোটেল সুফিয়া : কাঁঠালতলী, রাঙ্গামাটি, ফোন: 62145

কাপ্তাই লেক
কাপ্তাই লেক

সমাপ্তি

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অদৃশ্য ভালবাসুন ও অনুভব করুন যা আপনাকে চিরকাল মনে থাকবে। তাহলে আজই পর্যটনের পরিকল্পনা করুন এবং সময়ের সাথে সম্পৃক্ত হোন এই অপরূপ প্রাকৃতিক জুয়েলের সাথে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *