হাজাছড়া ঝর্ণা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবিস্মরণীয় রহস্যময় অনুভুতি এবং প্রাকৃতিক প্রদর্শনীর অদ্বিতীয় মজা জানতে যেখানে যাওয়া হয়, সেখানে বাংলার হাজাছড়া ঝর্ণা একটি অপরূপ স্থান। পার্বত্য রাঙ্গামাটির সমৃদ্ধ সহস্রবীর্য বনজলে অবিরাম ধারণা অনুভব করতে এই স্থানে পৌঁছে দেখতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে হাজাছড়া ঝর্ণা সাবাশ্রয় কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি নতুন অবলম্বন।
হাজাছড়া ঝর্ণার আকর্ষণ
হাজাছড়া ঝর্ণা, অথবা শুকনাছড়া ঝর্ণা, রাঙ্গামাটির জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত, একটি রহস্যময় অধ্যানের উপস্থিতি রেখে। এই ঝর্ণাটির উচ্চতা ও সান্দ্রতা দেখে আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন। আপনি এই অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা করতে যাচ্ছেন যখন আপনি তার সঙ্গে এক হতে হবে।

হাজাছড়া ঝর্ণা: আদিবাসীর অপূর্ব আবাসন
হাজাছড়া ঝর্ণার পাশে অবস্থিত সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট এলাকা প্রাকৃতিক প্রেমিকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। স্থানীয় আদিবাসীগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে এই এলাকার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তির মধ্যে হল হাজাছড়া ঝর্ণা। এই ঝর্ণার পাসে থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাহসী জীবনযাপনের দৃশ্য দেখা সম্ভব।
হাজাছড়া ঝর্ণা দর্শনের পথ
বাঘাইছড়ি উপজেলার ১০ নম্বর রাস্তা থেকে ১৫ মিনিটের ঝিরিপথে হেঁটে পৌঁছে যেতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণার পাদদেশে। ঝর্ণার সুন্দরতা এবং আবাসন অপ্রত্যাশিত অনুভুতির সাথে প্রাকৃতিক শ্রেণির মাঝে অপূর্ব অভিযান।
হাজাছড়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার সময়
হাজাছড়া ঝর্ণাতে সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে। শীতে জলের প্রবাহ কমে গেলেও বর্ষায় ঝর্ণাটি যেন পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। তাই শীতের আগে ও বর্ষার শেষে হাজাছড়া ঝর্ণা দেখতে গেলে ঝর্ণাটির আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।

হাজাছড়া ঝর্ণা দেখতে কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে হাজাছড়া ঝর্ণা দেখতে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, কলাবাগান এবং ফকিরাপুল থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়ার বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। আপনার পছন্দ ও বাজেট অনুযায়ী শান্তি পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া অথবা শ্যামলী পরিবহন হতে যেকোন একটিকে ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে বেছে নিতে পারেন। বাসভেদে এসি/নন-এসি জনপ্রতি টিকেটের ভাড়া ৭৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। ছুটির দিন গুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নয়তো পরে টিকেট পেতে ঝামেলা হতে পারে।
চট্রগ্রামের কদমতলী থেকে সারাদিনে ৪ টি বিআরটিসি এসি বাস খাগড়াছড়ির পথে চলাচল করে, ভাড়া লাগে ২০০ টাকা। আর অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘণ্টা পর পর শান্তি পরিবহনের (ভাড়া ১৯০টাকা) বাস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।
খাগড়াছড়িতে বাস থেকে নেমে মটর সাইকেল, বাস, চান্দের গাড়িতে চড়ে দিঘীনালা আসতে হবে। অথবা ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনের বাসে সরাসরি দিঘীনালা আসতে পারবেন। দিঘীনালা বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটরবাইক বা চাঁদের গাড়িতে চড়ে বাঘাইহাটের আগে ১০ নম্বরে নামতে হবে। ১০ নম্বর হতে ঝিরিপথে ১৫ মিনিট হাটলে হাজাছড়া ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়।
কোথায় খাবেন
হাজাছড়া ঝর্ণার আশেপাশে খাওয়া-দাওয়া করার কোন ব্যবস্থা নেই তাই সবচেয়ে ভাল হয় ঝর্ণায় যাওয়ার সময় শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানি নিয়ে যাওয়া। আর খাগড়াছড়ি শহরের কাছে পানখাই পাড়ায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সিস্টেম রেস্টুরেন্ট। খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চাইলে আপনাকে এখানেই খেতে হবে। যোগাযোগ: 0371-62634, 01556-773493, 01732-906322। আর যদি আপনার হাতে সময় থাকে তবে কাছেই নিউজিল্যান্ড পাড়া থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আপনাকে খাগড়াছড়িতে থাকতে হবে। পর্যটকদের থাকার সুবিধার কথা বিবেচনা করে খাগড়াছড়িতে বেশকিছু আবাসিক হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে। এদের মধ্যে পর্যটন মোটেল (0371-62084, 0371-62085), হোটেল শৌল্য সুবর্ণ (0371-61436), জিরান হোটেল (0371-61071), হোটেল লিবয়ত (0371-61220), চৌধুরী বাডিং (0371-61176), থ্রি ষ্টার (0371-62057), ফোর ষ্টার (0371-62240), উপহার (0371-61980), হোটেল নিলয় (01556-772206) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

অবসান
হাজাছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অনলাইন প্রদর্শনী। এটি আপনার জীবনের অন্যান্য স্মৃতি গড়ে তুলবে এবং আপনাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আরও সচেতন করবে। হাজাছড়া ঝর্ণা সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা করতে একটি অপূর্ব অভিযান নিয়ে যান এবং নিজেকে প্রকৃতির অদ্বিতীয় কৌশল আত্মসাত করতে দেখুন।