নীলগিরি

নীলগিরি একটি অপূর্ব সুন্দর পর্বতীয় অঞ্চল যা বাংলাদেশের পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হিসাবে পরিচিত। এই পাহাড়ের শীর্ষস্থ দৃশ্যতে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের নামের সাথে মিলে পর্যটকদের মাঝে এটির ডাকনাম “বাংলার দার্জিলিং” হিসাবে পরিচিত। এই লেখায়, আমরা নীলগিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভৌগোলিক অবস্থান, পর্যটন সুবিধা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করব।

নীলগিরি
নীলগিরি

Table of Contents:

  1. নীলগিরির অবস্থান ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
  2. নীলগিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
  3. নীলগিরির পর্যটন সুবিধা
  4. নীলগিরির আদিবাসী সংস্কৃতি
  5. নীলগিরির ভ্রমণের আদর্শ সময় ও অনুষ্ঠান
  6. নীলগিরি: বাংলার দার্জিলিং – পরিষ্কার এবং নিরাপদ ভ্রমণ

নীলগিরির অবস্থান ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:

নীলগিরি পাহাড় চট্টগ্রাম বন্দরবান জেলার অধীনে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম আরক্ষিত জেলার মধ্যে একটি, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী এবং পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। নীলগিরির উচ্চতা প্রায় ২২০০ ফুট, যা তাকিয়ে উঠলে এটি অনেক সময় মেঘ বুকে পড়ে যায়, এবং দূর দৃশ্যতে এটি একটি অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য প্রদর্শিত করে।

নীলগিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:

নীলগিরি একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক আকর্ষণ যেখানে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আনন্দ নিতে পারেন। এখানে পাওয়া সমুদ্র পৃষ্ট বিশাল মেঘ আর সাবান এর মত কলম নাকি মেঘের লুকোচুরি যে আকাশের নীল স্রোতমালার মতো পাহাড়ে হাসাহাসি করে বিস্মিত করে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মানিত অবস্থানে বৈঠক নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

নীলগিরির পর্যটন সুবিধা:

নীলগিরি একটি উত্তম পর্যটন গন্তব্য যেখানে পর্যটকরা অসাধারণ অভিজ্ঞতা অধিকার করতে পারেন। এখানে রয়েছে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট এবং ভালো খাবারের উপায় যা পর্যটকদের সন্তুষ্ট করে তুলে। আরো অনেক পর্যটকে আকর্ষণীয় করতে পারে বাড়তি পর্যটন সুবিধা যেমন হাইকিং, পার্যটিক ও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ইত্যাদি।

নীলগিরি
নীলগিরি

নীলগিরির আদিবাসী সংস্কৃতি:

নীলগিরির কাছের আদিবাসী গ্রাম থেকে পর্যটকরা তাদের অনুভূতি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারেন। এখানে তাদের জীবনযাত্রা, খাবার, ও সংস্কৃতি চেনার সুযোগ পাওয়া যায়।

নীলগিরির ভ্রমণের আদর্শ সময় ও অনুষ্ঠান:

নীলগিরি পর্যটকদের জন্য সার্বক্ষণিক গন্তব্য, তবে এটি হাজির করার জন্য অনুষ্ঠানের আদর্শ সময় পূর্বাহ্ন হতে পারে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্প এর অস্তিত্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে যা পর্যটকদের নিরাপত্তা সারমর্মভাবে নিশ্চিত করে।

নীলগিরি: বাংলার দার্জিলিং – পরিষ্কার এবং নিরাপদ ভ্রমণ:

নীলগিরি সম্পর্কে আমরা যতটা জানি, সেটা এখানে আপনাদের অভিজ্ঞতা করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের এই অপূর্ব পর্বতীয় অঞ্চলে ভ্রমণ করতে আসুন এবং নীলগিরির অপূর্ব সৌন্দর্যে আবিষ্কার করুন।

কখন যাবেন

নীলগিরি তার রূপের পসরা সারাবছরই মেলে ধরে রাখে। একেক সময়ে একেক রূপের আঁধার নীলগিরি। সকালে মেঘের ভেলার খেলা, সূর্যোদয়ের আলোর খেলা। বিকেলের সূর্যাস্ত কিংবা জ্যোৎস্না রাতের মায়াময় চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করবেই। সাধারণত বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে মেঘের ভেলার লুকোচুরি খেলা প্রত্যক্ষ করা যায় সুন্দর করে। আর এই জন্যে নীলগিরিতে খুব সকালে যেতে হবে। শরৎ আর হেমন্তের মেঘ আর নীল আকাশ মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। শীতে কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে চারপাশ। সে এক দেখার মত দৃশ্য। তাই নীলগিরি যেতে পারবেন যে কোন সময়ই। তবে বর্ষায় অতি বৃষ্টি হলে পাহাড় ধ্বসের আশংকা থাকে তখন অনেক সময় নীলগিরি যাবার রাস্তা বন্ধ থাকে।

নীলগিরি যাবার উপায়

দেশের যে প্রান্তেই থাকেন আপনাকে প্রথমে বান্দরবান আসতে হবে নীলগিরি যাবার জন্যে। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ, কল্যাণপুর, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৮০০-৯০০ টাকা ও এসি ১২০০-১৮০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ৩৪৫ থেকে ১১৭৯ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম আসতে পারবেন।

চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্রগ্রামের দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান আসতে পারবেন।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি :

বান্দরবান থেকে নীলগিরি যেতে পারবেন জীপ/চান্দের গাড়ি/মহেন্দ্র/সিএনজি অথবা লোকাল বাস দিয়ে। সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে গেলে। এতে করে আপনি আশেপাশের আরও কিছু জায়গায় ঘুরে দেখতে পারবেন। যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চান তাহলে বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩০০০-৫০০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া আসা সহ গাড়ি ঠিক করে নিতে হবে। চাঁন্দের গাড়ী গুলোতে ১২-১৪ জন যেতে পারবেন, ল্যান্ডক্রুজার টাইপ জীপ গুলোতে ৭-৮ জন যেতে পারবেন, ছোট জীপ আছে সেগুলোতে ৪-৫ জন থেকে পারবেন আর সিএনজিতে ৩-৪ জন। রাস্তায় কোন সমস্যা না থাকলে যেতে সময় লাগবে দুই থেক সাড়ে দুই ঘন্টার মত। নীলগিরিতে যদি মেঘের দেখা পেতে চান তাহলে আপনাকে খুব ভোরে রওনা দিতে হবে যেন ৭-৮ টার ভিতর নীলগিরি থাকতে হবে।

সদস্য সংখ্যা কম হলে কিংবা কম খরচে যেতে চাইলে লোকাল বাসে যেতে পারেন, তবে এতে সময় লাগবে বেশি। থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে ১ ঘন্টা পর পর থানচির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ১২০ টাকা। তবে আপনি চাইলে অন্য কোন গ্রুপ নীলগিরি যাবে তাদের সাথে যোগ হয়ে যেতে পারেন ভাড়া শেয়ার করে।

নীলগিরি যাওয়ার পথে নিরাপত্তার জনিত কারণে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। সাধারণত বিকেল ৫ টার পর থেকে নীলগিরির উদ্দেশে আর কোন গাড়ীকে যেতে দেয়া হয় না তাই ভ্রমণের পূর্বে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাবার জন্যে পর্যটকদের কাছ থেকে টিকেট বাবদ জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং গাড়ির জন্য আলাদা ৩০০ পার্কিং ফি নেয়া হয়।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলগিরি যাবার পথেই মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, শৈল প্রপাত ঝর্ণা, সাইরু হিল রিসোর্ট ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র পার হয়ে যেতে হবে। রিজার্ভ গাড়ি নিলে এই স্পট গুলোতে নেমে কিছু সময় অতিবাহিত করতে পারবেন। গাড়ি ঠক করার সময় আগে থেকেই বলে রাখবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সকালে সরাসরি নীলগিরি চলে গেলে তাহলে মেঘের দেখা পাবেন। ফিরে আসার সময় চিম্বুক পাহাড়ে কিছু সময়, তারপর শৈলপ্রপাত ঝর্ণাতে কিছু সময় কাটিয়ে আসবেন। আর যাবার পথেই মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্টে চেকপোস্টে নামতে হবে তখন সেখান থেকে চারপাশের সুন্দর দৃশ্য দেখে নিতে পারবেন। আবার উল্টোটাও করতে পারেন যদি প্ল্যান থাকে বিকেল বেলা নীলগিরিতে সময় কাটাবেন তাহলে যাবার পথেই শৈলপ্রপাত ঝর্ণা ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্রে কিছু সময় পার করে তারপর নীলগিরি যাবেন।

নীলগিরি
নীলগিরি

কোথায় থাকবেন

নীলগিরিতে বাংলাদেশ সেনবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নীলগিরি রিসোর্টে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। ছয়টি কটেজে থাকার জন্য প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ৮,০০০ টাকা। নীলগিরি রিসোর্ট সবার কাছে আকর্ষনীয় হওয়ায় সাধারণত মাসখানেক আগে বুকিং না দিলে রুম পাওয়া যায় না, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পূর্ব বুকিং ছাড়া রুম পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যোগাযোগ: 01769-299999

এছাড়া বেশীরভাগ পর্যটক বান্দরবান থেকে নীলগিরি দিনে গিয়ে দিনেই বান্দরবান ফিরে আসেন। বান্দরবানে থাকার জন্যে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশেই হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে:

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

নীলগিরিতে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, খিদে পেলে পেট ভরে সেখান থেকে খেয়ে নিতে পারেন। তবে সেখানে খেতে হলে আগে থেকে অর্ডার করে রাখতে হবে, জনপ্রতি ৩০০-৬০০ টাকায় খেতে পারবেন। অথবা ফিরে এসে বান্দরবান শহরে খেয়ে নিতে হবে। যাবার সময় কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে নিতে পারেন। বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্যে রয়েছে বেশি কিছু রেস্তোরা, তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।

সমাপ্তি:

নীলগিরি একটি অপূর্ব পর্বতীয় অঞ্চল যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আদিবাসী সংস্কৃতির মেলবন্ধন আপনাকে বিমোহিত করবে। আমাদের এই ভ্রমণ গাইড আপনাকে নীলগিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, পর্যটন সুবিধা এবং আদিবাসী সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ দেবে। তাহলে চলুন, এই স্বর্গীয় স্থানে প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করার জন্য নীলগিরি ভ্রমণ করা শুরু করি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *