অঙ্গীকার ভাস্কর্য

অঙ্গীকার ভাস্কর্য

চাঁদপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশের লেকে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে অঙ্গীকার ভাস্কর্য (Ongikar Monument) নির্মাণ করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যকে ধ্যানে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ এই অসাধারণ ভাস্কর্যটির স্থপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ হিসেবে খ্যাত ১৫ ফুট উচ্চতার অঙ্গীকার ভাস্কর্য তৈরিতে সিমেন্ট, পাথর এবং লোহা ব্যবহার করা হয়েছে।

অঙ্গীকার ভাস্কর্য
অঙ্গীকার ভাস্কর্য

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের ঐতিহাসিক পৃষ্ঠ

চাঁদপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অঙ্গীকার ভাস্কর্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অমর স্মৃতির চিহ্ন। এই ভাস্কর্য চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশের লেকে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে অঙ্গীকার ভাস্কর্যের নির্মাণ করা হয়েছিল। এই অঙ্গীকার ভাস্কর্যের স্থপতি ছিলেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। অঙ্গীকার ভাস্কর্যে সিমেন্ট, পাথর এবং লোহা ব্যবহার করে তৈরি হয়েছিল।

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের অর্থ এবং প্রাসঙ্গিকতা

অঙ্গীকার শব্দের অর্থ হলো ‘একমত’ বা ‘স্বীকৃতি’। এই ভাস্কর্যের নাম অঙ্গীকার হওয়া স্বাভাবিক, কারণ এটি একটি ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক। মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের ক্ষুদ্র থেকে মহান অংশের একত্ব এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ভাস্কর্যর ডিজাইন এবং অর্থ

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের ডিজাইন এবং নির্মাণের পৃষ্ঠপুষ্টি প্রচুর গুরুত্ব রয়েছে। ভাস্কর্যের উপরে উঠা বদ্ধমুষ্ঠি স্বাধীনতার পক্ষে জনতার দৃঢ়তার প্রতীক। এটি স্বাধীনতা ও সাহসের সঙ্গে জড়িত মানুষের বীরত্ব ও অধিকারের প্রতীক। অঙ্গীকার ভাস্কর্যে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা অস্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষার শক্তিকে প্রকাশ করা হয়েছে।

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের ডিজাইন এবং নির্মাণ একটি অমূর্ত কার্যকরী উদাহরণ, যা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং সাহসের স্থায়িত্ব দেখায়। এই ভাস্কর্যের সংকেতমূলক ডিজাইনে একটি বদ্ধমুষ্ঠি উঠে তার দিকে প্রতীক্ষার নজর দেখায়, এটি স্বাধীনতা ও সাহসের সংগে জড়িত মানুষের বীরত্ব ও অধিকারের প্রতীক। এই বদ্ধমুষ্ঠি স্বাধীনতার পক্ষে জনতার দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে দেখা যায়, এটি মুক্তিযোদ্ধাদের আগ্রহ ও সমর্থন প্রকাশ করে। ভাস্কর্যে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা অস্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষার শক্তিকে প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্য একটি অসামান্য আলোকিত বিষয়বস্তু যা মুক্তিযোদ্ধাদের অকল্পনীয় বীরত্ব এবং সমর্থন বিষয়ে জাগ্রত করে।

এই ভাস্কর্য নির্মাণে একেবারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে যেখানে সিমেন্ট, পাথর এবং লোহা সম্মিলিত করে ব্যবহার করা হয়েছে। এই মিশ্রণ একটি স্থিতিশীল এবং দৃঢ় মজবুত স্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভাস্কর্যের উচ্চতা এবং কাঠামো ঠিকানার উপর খুবই ভাল ভাবে বিচার করা হয়েছে যাতে এটি দূরদৃষ্টির কোনো মাধ্যম না হয়ে অপসারণ হয়ে যায়।

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের নির্মাণ প্রক্রিয়াতে সামাজিক ও ঐতিহাসিক অবদানের মূল্য স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ভাস্কর্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন, সাহায্য, এবং সম্মান প্রকাশে একটি উদাহরণ হিসেবে অংশগ্রহণ করে। এটি একটি স্থায়ী স্মৃতি এবং সম্মানের মূর্তি, যা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা আন্দোলন।

অঙ্গীকার ভাস্কর্য
অঙ্গীকার ভাস্কর্য

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের সামাজিক প্রভাব

অঙ্গীকার ভাস্কর্য চাঁদপুরের অবস্থিত একটি সুন্দর ও ঐতিহাসিক স্থান। এটি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পরিচয় এবং শহীদদের স্মরণের অনলাইন স্থান হিসেবে অভিহিত হয়েছে। এটি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

অঙ্গীকার ভাস্কর্য চাঁদপুরের অবস্থিত একটি অমূল্য স্মৃতি স্থান, যা মুক্তিযুদ্ধের মহান ঐতিহাসিক অংশের সাথে সংযোগ করে। এটি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর একটি অবস্থান হিসেবে পরিচিত। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে একটি স্থায়ী প্রতীক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং তাদের বীরত্ব এবং উৎসাহকে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অঙ্গীকার ভাস্কর্য যে সমাজে আদর্শ ও সাহায্য প্রকাশ করে, তা আমাদের সমাজের প্রতি প্রভাব বেশি হয়ে উঠে। এটি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের মধ্যে আরও আত্মসম্মান এবং অনুশাসন উৎপন্ন করে। এটি সমাজে একটি ঐক্যবদ্ধতা এবং সমর্থন বাড়াতে সহায়ক। অঙ্গীকার ভাস্কর্য চাঁদপুরের মানুষের মধ্যে জীবনধারার একটি গভীর প্রভাব প্রকাশ করে এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হিসেবে কাজ করে।

অঙ্গীকার ভাস্কর্যের ভবিষ্যৎ

চাঁদপুরের অঙ্গীকার ভাস্কর্য একটি প্রতিষ্ঠানিক স্থান হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। এই স্থানে প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে অঙ্গীকার ভাস্কর্যের পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়ে থাকে। এটি প্রতিদিন বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাস্কর্যের চারপাশ অসংখ্য দর্শনার্থীর পদভারে মুখর হয়ে উঠে। চাঁদের আলোতে লেকের জলে অঙ্গীকার ভাস্কর্যের ছাড়া দেখতে অসাধারণ লাগে।

অঙ্গীকার ভাস্কর্য
অঙ্গীকার ভাস্কর্য

সামাপ্তি

চাঁদপুরের অঙ্গীকার ভাস্কর্য একটি অমর স্মৃতির প্রতীক, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ ও স্তুতি প্রদান করা হয়। এই স্থানে প্রতিবছর অনেক আসন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগ্রহ আকর্ষণ করে। অঙ্গীকার ভাস্কর্য চাঁদপুরের ঐতিহাসিক এবং ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্মৃতিস্থল হিসেবে অবদান রাখে।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হতে প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে ১ ঘন্টা পর পর বেশকিছু লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা হতে চাঁদপুরগামী লঞ্চের মধ্যে এমভি সোনারতরী, এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি আল বোরাক, এমভি ঈগল, এমভি রফরফ, এমভি তুতুল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার লঞ্চের ভাড়া শ্রেনী ভেদে ১০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। জলপথে ঢাকা থেকে চাঁদপুর পৌঁছাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময় লাগে।

এছাড়া ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পদ্মা এক্সক্লিসিভ বাস চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার চাইলে ঢাকা হতে ট্রেনে চড়ে চাঁদপুরে যেতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে লাকসাম এসে সেখান থেকে চাঁদপুর যেতে হবে।

চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে অঙ্গীকার ভাস্কর্যের দূরত্ব মাত্র ১.৫ কিলোমিটার। শহরের যেকোন স্থান থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সায় চড়ে ভাস্কর্যে পৌঁছাতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

চাঁদপুর শহরে থাকার জন্যে ভাল মানের হোটেলের মধ্যে হোটেল গ্র্যান্ড হিলশা অন্যতম। এছাড়া চাঁদপুরে কোর্ট ষ্টেশনের কাছে মোটামুটি মানের আরও কিছু আবাসিক হোটেল পাবেন। চৌধুরী ঘাট বা নতুন ব্রিজের কাছে নদীর পাড়ে কিছু মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

খিদে মেটানোর জন্য চাঁদপুরে বিভিন্ন মানের বেশকিছু খাবার হোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দমত যেকোন হোটেলে খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। তাজা ইলিশ খেতে চাইলে বড়স্টেশনের ঝুপড়ির হোটেল অথবা লঞ্চ ঘাটের হোটেল গুলোতে খোঁজ নিতে পারেন। সেই সাথে ফরিদগঞ্জের আউয়াল ভাইয়ের মিষ্টি এবং ওয়ান মিনিট আইসক্রিমের চেখে দেখতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *