কেল্লা শহীদ মাজার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ শরীফটি কেল্লা শহীদ মাজার (Kella Shahid Mazar) নামে সারা বাংলাদেশে পরিচিত। এই মাজারের পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কাহিনী, যা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দরগা শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৬০ একর জমি দান করেন। আবার অনেকের মতে, হযরত শাহ জালাল (রঃ)-এর সাথে যে ৩৬০ জন শিষ্য সিলেট আগমণ করেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তরফ রাজ্যের রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে যুদ্ধে হযরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ শহীদ হন এবং তাঁর খন্ডিত মস্তক নদীর স্রোতে ভেসে যায়। বার্ষিক ওরস ও সারা বছরজুড়ে কেল্লা শহীদ মাজার প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর আগমণ ঘটে।

খন্ডিত শিরের অলৌকিক কাহিনী
প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, তিতাস নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে খড়মপুর এলাকার জেলেরা একদিন তাদের জালে একটি খন্ডিত শির আটকে পায়। চৈতন দাস ও তার সাথের অন্যান্য জেলেরা যখন শিরটি তুলতে চান, তখন সেটি অলৌকিকভাবে কথা বলতে শুরু করে। মস্তকটি বলে যে, একজন আস্তিক ও একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না এবং তাদের মুসলমান হতে হবে। এই কথা শুনে হিন্দু জেলেরা কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যায় এবং খন্ডিত শিরের নির্দেশ অনুযায়ী খড়মপুর কবরস্থানে শিরটি দাফন করা হয়। এই ধর্মান্তরিত জেলেরাই কেল্লা শহীদ মাজারের আদিম বংশধর হিসেবে পরিচিত।
দরগাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা
তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দরগাহ শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৬০ একর জমি দান করেন। অনেকের মতে, হজরত শাহ জালাল (রঃ)-এর সাথে ৩৬০ জন শিষ্য সিলেটে আগমন করেন, তাদের মধ্যে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ অন্যতম ছিলেন। তরফ রাজ্যের রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে যুদ্ধে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ শহীদ হন এবং তার খন্ডিত মস্তক নদীর স্রোতে ভেসে যায়। সেই মস্তকই পরে কেল্লা শহীদ মাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বার্ষিক ওরস
প্রতি বছর কেল্লা শহীদ মাজারে বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়, যা হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে। এই ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এবং দরগাহ শরীফ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। ওরসের সময় মাজার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।

সারাবছরের ভক্তদের আগমন
বার্ষিক ওরস ছাড়াও সারাবছর কেল্লা শহীদ মাজারে ভক্তদের আগমন ঘটে। মাজারে আসা ভক্তরা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য দোয়া করেন এবং প্রার্থনা করেন। এখানে আসা ভক্তদের বিশ্বাস, মাজারে প্রার্থনা করলে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
কেল্লা শহীদ মাজারের (kella shahid mazar) আধুনিক অবকাঠামো
বর্তমানে কেল্লা শহীদ মাজারের প্রাঙ্গণে আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। মাজারের পরিবেশ সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। মাজার প্রাঙ্গণে ভক্তদের সুবিধার্থে বসার ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা এবং শৌচাগার রয়েছে। এছাড়াও মাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
মাজারের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
কেল্লা শহীদ মাজার (kella shahid mazar) কেবল একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান নয়, এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মাজারের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ওরসের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মধ্যে একতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, মাজারের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, কারণ বার্ষিক ওরসের সময় অনেক মানুষ এখানে আসে এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে।

উপসংহার
কেল্লা শহীদ মাজার (kella shahid mazar) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান। এর পেছনের অলৌকিক কাহিনী, বার্ষিক ওরস এবং সারাবছরের ভক্তদের আগমন মাজারটিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে। মাজারের আধুনিক অবকাঠামো ও ধর্মীয় গুরুত্ব এটিকে একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কিভাবে যাবেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে আখাউড়ার দূরত্ব প্রায় ২৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে যেতে পারবেন। বাসে গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছে কাউতলী থেকে লোকাল সিএনজি নিয়ে যেতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ঢাকা হতে ট্রেনে সরাসরি আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসা। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকেটের ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ৫৭৫ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামগামী যে সকল ট্রেন আখাউড়া স্টপেজ দেয় সেগুলির যেকোন একটা ট্রেনে চেপেও আখাউড়া আসতে পারবেন। আখাউড়া থেকে স্থানীয় পরিবহণে চড়ে মাত্র ২.৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কেল্লা শহীদ মাজার যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
আখাউরায় মোটামুটি মানের কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসেও রাত্রিযাপন করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
আখাউড়ায় বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আখাউড়া বাজারে অবস্থিত নাইন ষ্টার হোটেলের গরুর মাংসের খিচুড়ি বেশ সুনাম ছড়িয়ে আছে।