মহিষারের দিগম্বরী দীঘি

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রাচীন প্রাচীন স্থানগুলির মধ্যে মহিষারের দিগম্বরী দীঘি একটি অবশালী অংশ। এই দীঘি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে একটি প্রমুখ তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গৌরব সম্পন্ন কল্প-কাহিনী ও ধারণা প্রচলিত রয়েছে। মহিষারের দিগম্বরী দীঘির অভ্যন্তরে সুন্দর অমর সাক্ষী প্রচুর। এখানে প্রচুর ঐতিহাসিক ও ধার্মিক গুরুত্বের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক মূল্য সংরক্ষিত রয়েছে।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি
মহিষারের দিগম্বরী দীঘি

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির ইতিহাস

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার অবস্থিত ৬০০ বছরের পুরনো মহিষারের দিগম্বরী দীঘি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এই দীঘির ইতিহাসে বিশেষ মর্মান্তিক ঘটনা ও ঐতিহাসিক উল্লেখ রয়েছে। মোঘল আমলের স্বাধীন ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া বিক্রমপুর পরগনার জমিদার রাজা চাঁদ রায় দিগম্বরীর সন্ন্যাসীদের অনুরোধে ১০ একর জায়গার উপর এই দীঘি খনন করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে এই দীঘির মূল উৎস নির্ধারিত হয়।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির চারপাশে ইতিহাসের অমর সাক্ষী দিগম্বরী সন্ন্যাসী বাড়ি, মেলা চত্বর, জোড়া পুকুর, মনসা মন্দির, কালি মন্দির চত্বর ও লক্ষ্মী মন্দিরসহ অসংখ্য স্থাপনা ঘিরে রয়েছে। এই স্থাপনাগুলির পুনঃখননের সময় ১৯৮২ সালে অনেকগুলি দুর্লভ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির কল্প-কাহিনী

এই প্রাচীন দীঘি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বেশ কিছু কল্প-কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তাদের বিশ্বাস, মহিসার দীঘির জলে স্নান করলে পাপ ও রোগ থেকে মুক্তি মিলে। এই বিশেষ ধর্মীয় মানত এবং ঐতিহাসিক প্রতীকবাদ সে সময়ে থেকে এখানে জমিরেছে। এতে মোগোল আমলের শাসকদের সময়ে এটি আরও প্রকাশিত হয়।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি একটি অত্যন্ত প্রাচীন স্থান, যেখানে নানা কল্প-কাহিনী ও ঐতিহাসিক বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। এই দীঘির জলে স্নানের অনেক ধরণের ধার্মিক মূল্য আছে এবং এটি একটি ঐতিহাসিক প্রতীকবাদ হিসেবে গণ্য হয়ে উঠেছে। এই কাহিনীগুলির মধ্যে অনেক রহস্যময়তা এবং অদ্ভুত ঘটনার কথা বলে যেতে পারে।

প্রাচীন ধার্মিক কল্প-কাহিনী

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির চারপাশের জলে স্নানের ধার্মিক মূল্য একে অন্যের থেকে অনেকটাই আলাদা। স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দীঘিতে স্নান করলে মানুষ তাদের পাপ থেকে মুক্তি পায় এবং ধর্মীয় পুনরুত্থান লাভ করে। এটি একটি ধার্মিক অধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যা অত্যন্ত গভীরভাবে স্থানীয় মানুষের মধ্যে রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রতীকবাদ

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির ঐতিহাসিক প্রতীকবাদে মোগোল আমলের শাসকদের সময়ে এটি আরও প্রকাশিত হয়েছিল। তারা এই দীঘির চারপাশে বিভিন্ন স্মৃতিগুলি নির্মিত করেছিলেন এবং এটির জলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপযোগিতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায় গড়ে তুলেছিলেন। এই প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রতীকবাদ এখনও এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির একটি অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির কল্প-কাহিনীগুলি স্থানীয় মানুষের মধ্যে অধ্যাত্মিক সন্নিধান এবং ঐতিহাসিক গর্বের সূত্রধার। এই কাহিনীগুলি অত্যন্ত মৌলিক এবং গভীরভাবে নিয়ে গড়ে উঠা মহিষারের দিগম্বরী দীঘির সম্পর্কে মানুষের বোধশক্তি বৃদ্ধি করে আসে।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি
মহিষারের দিগম্বরী দীঘি

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি আজকের পর্যটন গন্তব্য

বর্তমানে দিগম্বরী দীঘি ও আশেপাশের বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে একটি অন্যতম পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় এই অঞ্চলে পর্যটনকারীদের ধরে খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান। প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি, সুন্দর প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি এবং ধর্মীয় পরিমাণ এই অঞ্চলটি পর্যটন উদ্যোগীদের আকর্ষিত করে তাদের প্রত্যাশা বাড়াতে।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি, সুন্দর প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি এবং ধর্মীয় পরিমাণ একত্রে মিলে পর্যটকদের আকর্ষণীয় একটি অঞ্চল তৈরি করেছে। এখানে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন:

ঐতিহাসিক ভ্রমণ

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির চারপাশে অনেকগুলি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে, যেমন মন্দির, বাড়ি, এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্মৃতি। এই স্থাপনাগুলি মোগোল আমলের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক প্রাচীনতা ও ঐতিহাসিক বিশ্বাসের সাথে পরিপূর্ণ এই স্থানগুলি ঐতিহাসিক প্রতীকবাদ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক ভ্রমণে অংশ নেওয়া পর্যটকরা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ধারার অধ্যাত্মিকতা এবং সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন।

প্রাকৃতিক আকর্ষণ

মহিষারের দিগম্বরী দীঘির পার্শ্বে সুন্দর প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি রয়েছে। এখানে বৃহত্তম পরিমাণে পানির মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়। প্রাকৃতিক আকর্ষণে আগ্রহী পর্যটকরা বৃষ্টির সময়ে এই দীঘির চারপাশে নেমে প্রশান্তিপূর্ণ দৃশ্য অনুভব করতে পারেন।

ধার্মিক পরিমাণ

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি ধর্মীয় পরিমাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ বেশিরভাগ সময় ধর্মীয় উপলক্ষ্যে এই দীঘিতে আসেন। তারা এখানে পাপ মুক্তি এবং আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির আশা করেন। ধার্মিক পরিমাণে অন্যতম মহিষারের দিগম্বরী দীঘি একটি প্রতিষ্ঠান।

এই কারণে, মহিষারের দিগম্বরী দীঘি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্থাপিত হয়েছে। এখানে পর্যটকরা প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি এবং সুন্দর প্রাকৃতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে ধার্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

মহিষারের দিগম্বরী দীঘি
মহিষারের দিগম্বরী দীঘি

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্লোরি এক্সপ্রেসে মাওয়া ঘাট পার হয়ে শরীয়তপুর যেতে পারবেন। এসব বাসে মানভেদে ভাড়া লাগবে ২৫০-৩০০ টাকা। শরীয়তপুর জেলা শহর পৌঁছে স্থানীয় যানবাহনে মহিষারের দিগম্বরী দীঘি দেখতে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

শরীয়তপুর শহরে শিকদার আবাসিক হোটেল, নূর ইন্টার ন্যাশনাল, হোটেল শের আলী ও চন্দ্রদাস রেস্ট হাউজের মতো আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

শরীয়তপুর শহরে রুচিতা কাবাব ঘর, সুগন্ধা রেস্টুরেন্ট, রাফি ফুড কর্নার ও গার্ডেন রেস্টুরেন্টের মতো বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে।

শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

শরীয়তপুর জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বুড়ির হাট জামে মসজিদ, রুদ্রকর মঠ, সুরেশ্বর দরবার শরীফ, ধানুকা মনসা বাড়ি ও মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম অন্যতম।

Similar Posts

  • মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম

    কখনো মনে হয়েছে যে, আমাদের জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু প্রশান্তি অনুভব করতে পারতাম কিন্তু সেই সময়টা পাওয়া সত্ত্বেও একটি উদ্যোগ আসত সামনে। ২০১১ সালে, মডার্ন হারবাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. আলমগির মতি প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মনোরম পরিবেশে একটি আদর্শ বিনোদন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম (Modern Fantasy Kingdom)…

  • সুরেশ্বর দরবার শরীফ

    শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় অবস্থিত সুরেশ্বর গ্রামে একটি অদ্ভুত পর্যটন স্পট, সুরেশ্বর দরবার শরীফ। এই দরবারে স্থাপিত হলো হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ), একজন বিখ্যাত আওলিয়া ও সুফি যিনি একাধিক প্রশংসিত হলেন তাঁর দেশে। তাঁর অনুগত ভক্তগণ এই স্থানকে “জানু বাবা” এবং “দয়াল বাবা” নামে ডাকেন। সুরেশ্বর দরবার শরীফের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও পবিত্রতা কোনো…

  • ধানুকা মনসা বাড়ি

    বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ধর্মগ্রন্থ প্রশস্ত এলাকায়, শরীয়তপুরে, অবস্থিত ধানুকা মনসা বাড়ি একটি নগরের মতো অভিনব সৌন্দর্যের চেহারা প্রদর্শন করে। এই ঐতিহাসিক স্থানের পেছনে গুপ্তধন, ভবনের আকৃতি, এবং ঐতিহাসিক মূল্য নিয়ে অজানা গল্প সমৃদ্ধ। ধানুকা মনসা বাড়ির পরিচয়ের বাইরে বেশিরভাগের মানুষের কাছে এই স্থানের অতিরিক্ত মহত্ত্ব অজানা থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা অন্যত্র উল্লেখ্য ধানুকা মনসা…

  • বুড়ির হাট জামে মসজিদ

    বুড়ির হাট জামে মসজিদ (Burir Hat Jame Masjid) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি স্থাপনা। এই মসজিদ বাংলাদেশের ইসলামী স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শনের হিসাবে পরিচিত। এটির নির্মাণ একশত বছরের প্রায় পূর্বে করা হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেদরগঞ্জের সর্বোত্তম স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধারণ করে আছে। মসজিদের ইতিহাস বুড়ির হাট জামে মসজিদের নির্মাণের সময়ে বাংলাদেশে ইসলামী…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *