শিমুল বাগান

শিমুল বাগান

বাংলাদেশের নানা অবস্থানে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিশে গড়ে তোলা সমৃদ্ধ প্রান্তে অবস্থিত শিমুল বাগান একটি অপূর্ব স্থান। এই ব্লগ পোস্টে আমরা শিমুল বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করব।

শিমুল বাগানের ঐতিহ্য

শিমুল বাগান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এই শিমুল বাগানে আছে প্রায় ৩ হাজার শিমুল গাছ। ২০০৩ সালের দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এই বাগান শুরু করেন এবং তাঁর নাম অনুসারেই এই জায়গার নাম জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।

শিমুল বাগান
শিমুল বাগান

শিমুল ফুলের মগ্ন সৌন্দর্য

বসন্তকালে শিমুল বাগানের দিকে তাকালে গাছের ডালে ডালে লেগে থাকা লাল আগুনের ঝলখানি চোখে এসে লাগে। শিমুল ফুলের রক্ত লাল পাপড়িগুলোর এই সৌন্দর্য্য এখানে আসা সমস্ত মানুষের মনকেই রাঙিয়ে দেয়। এক দিকে মেঘালয়ের পাহাড় সারির অকৃত্রিম সৌন্দর্য্য অন্য দিকে রূপবতী যাদুকাটা নদী তীরের শিমুল বাগানের লাল ফুলের সমাহার মনে ভাল লাগার শিহরণ ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। চারপাশে ঝরা ফুলের ওপর হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে স্বর্গীয় লালগালিচায় বুঝি আপনি হেঁটে চলেছেন।

শিমুল বাগানে ভ্রমণ: এক নির্মিত স্বপ্ন

শিমুল বাগানে ভ্রমণ একটি নির্মিত স্বপ্ন। এখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত হতে পারবেন এবং মনোরম ফলের অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারবেন। বন্ধুবান, পরিবেশবাদী, ও চা-পানির মধ্যে একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুভূতি অনুভব করতে এখানে ভ্রমণ করুন।

শিমুল বাগান
শিমুল বাগান

কীভাবে যাবেন

শিমুল বাগান যেতে চাইলে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদরে আসতে হবে। ঢাকার মহাখালী, গাবতলী, সায়দেবাদ ও ফকিরাপুল থেকে এনা, হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের বাস নিয়মিত সুনামগঞ্জ রুটে যাতায়াত করে। নন-এসি এসব বাসে ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। বাসে সুনামগঞ্জ যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬ ঘণ্টা।

শুকনো সময়ে সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়েরগড় হয়ে অথবা তাহিরপুর হয়ে শিমুল বাগান যাওয়া যায়। যেভাবেই যেতে যান সময় লাগবে প্রায় ২ঘন্টা। সারাদিনের জন্যে গাড়ি রিজার্ভ করলে শিমুল বাগান সহ আশেপাশের অন্যান্য জায়গাও ঘুরে দেখা যাবে। মোটরসাইকেলে ২জন যেতে পারবেন, সারাদিনের জন্যে ভাড়া লাগবে ১০০০-১৫০০ টাকা এবং সিএনজিতে ১৭০০-২২০০ টাকা। খরচ কমাতে চাইলে সুনামগঞ্জ থেকে বাইকে বা সিএনজিতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত গিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে পারবেন শিমুল বাগান। আর বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর দেখার পাশাপাশি শিমুল বাগান সহ বাকি সব জায়গা নৌকা নিয়েই ঘুরে দেখা যায়।

নেত্রকোণা থেকেও শিমুল বাগান যাওয়া যায়। তবে শুকনো সময়ে মোটরবাইক একমাত্র উপায়। নেত্রকোণা থেকে কলমাকান্দা হয়ে পাঁচগাঁও বাজার। সেখান থেকে মহিষখোলা হয়ে টেকেরঘাট, টেকেরঘাট থেকে শিমুল বাগান। বর্ষাকালে মোহনগঞ্জ থেকে ধর্মপাশা হয়ে নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়া যায়। হাওর দেখার পাশাপাশি শিমুল বাগান ঘুরে দেখা যাবে।

আশেপাশের অন্যান্য স্থান

শিমুল বাগান ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরা সাধারণত সুনামগঞ্জ জেলার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান একসাথেই ঘুরে দেখার জন্যে যায়। আপনি চাইলে একদিনে আরও কিছু স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। আপনার হাতে সময় কেমন আছে ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে পারবেন। যেমন একদিনে আশেপাশে ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেন তাহলে এইভাবে পরিকল্পনা করতে পারনে।

সুনামগঞ্জ থেকে লাউরের গড় হয়ে যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য দেখে ঐপাড়ে বারিক টিলার চূড়ায় সময় কাটিয়ে সেখান থেকে শিমুল বাগান দেখে টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক) ঘুরে ফিরে আসতে পারেন। আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচের ভ্রমণ স্থান গুলোর বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।

যাদুকাটা নদী
শহীদ সিরাজ লেক বা নিলাদ্রী লেক
বারিক্কা টিলা
টাংগুয়ার হাওড়

কোথায় থাকবেন

শিমুল বাগানের কাছাকাছি তেমন ভালো থাকার হোটেল নেই। যদি থাকতেই তবে টেকেরঘাট নীলাদ্রী লেকের কাছে বড়ছড়া বাজারের হোটেল খন্দকার, হোটেল নিলাদ্রি অথবা মেঘালয়া গেস্ট হাউজে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায় রুম পাওয়া যাবে। শিমুল বাগানের কাছে বাদাঘাট বাজারের আল মদিয়া হোটেল তুলনামূলক ভালো হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জ শহরে ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাবেন।

কয়েকটি হোটেলের নাম ও ঠিকানা

হোটেল খন্দকার – বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট
হোটেল নীলাদ্রি – বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট
হোটেল আল মদিনা – বাদাঘাট বাজার, তাহিরপুর
হোটেল সারপিনিয়া – জগন্নাথবাড়ী রোড, সুনামগঞ্জ
হোটেল নূর – পূর্ব বাজার স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ
হোটেল মিজান, পূর্ব বাজার, সুনামগঞ্জ
সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট
হোটেল নূরানী, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড , সুনামগঞ্জ
হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড

কোথায় খাবেন

শিমুল বাগানকে ঘিরেই কিছু অস্থায়ী খাবার দোকান আছে, প্রয়োজনে সেখানে খেতে পারবেন। এছাড়া বারিক টিলার নিচে, লাউড়েরগর বাজার, বড়ছড়া বাজার ও বাদাঘাট বাজারে কিছু মোটামুটি মানের দেশীয় খাবার হোটেল আছে। খুব ভালো খাবার আশা করা ঠিক হবে না। তবে স্থানীয় তাজা সবজী, হাওরের নানা মাছ, ভর্তা ভাজির নানা পদের খাবারের স্বাদ খুব খারাপ লাগবেনা।

শিমুল বাগান
শিমুল বাগান

সমাপ্তি

শিমুল বাগান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক জগত। এখানে আপনি প্রকৃতির মাধুর্য অনুভব করতে পারবেন এবং একটি নির্মিত পরিবেশের সম্পর্কে অনুভব করতে পারবেন। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশে গড়ে তোলা বাংলাদেশের সাহায্যে আপনি শিমুল বাগানে অনুভব করতে পারবেন এবং এই অভিযান আপনার মনে খুঁজে পাবে নিরাপদ ও অনবরত সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা।

Similar Posts

  • নীলাদ্রি লেক

    নীলাদ্রি লেক, সুনামগঞ্জের একটি অবিস্মরণীয় পর্যটন স্থান, যা চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনির লাইম স্টোন খনির খনিকর্মস্থল হিসেবে পরিচিত। এই নীলাদ্রি লেক অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট নামক গ্রামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লেকটির আকর্ষণে অনেকে এটিকে বাংলার কাশ্মীর হিসাবে উল্লেখ করেন। এই নিবন্ধে আমরা নীলাদ্রি লেকের অদ্ভুত সৌন্দর্য, পর্যটনের সুযোগ, ও সংশ্লিষ্ট তথ্য…

  • টাঙ্গুয়ার হাওর

    বাংলাদেশ, একটি দরিদ্র দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরিহার্য অভাব মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মাঝেমাঝে অবিস্মরণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পন্ন অঞ্চলগুলো রয়েছে, যেখানে আপনি প্রকৃতির অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত মনোরম এবং অনন্য – টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর: পরিচিতি ও আকর্ষণীয়তা টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জের অপরুপ একটি নৈসর্গিক আকর্ষণ। এই হাওর প্রায়…

  • লালঘাট ঝর্ণাধারা

    সুনামগঞ্জ জেলার সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলা সংলগ্ন ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থিত লালঘাট ঝর্ণাধারা (Lalghat Waterfall) প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অমূল্য রত্ন। এই ঝর্ণাধারা প্রবাহ করে পানি লালঘাট গ্রামের পশ্চিম দিকে আঁকা-বাঁকা ছড়া রূপে সংসার হাওরের মিঠা পানির সাথে মিলিত হয়েছে। এটি মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে অবিরাম গতিতে নিচে নেমে এসেছে। লালঘাট ঝর্ণাধারা পর্যটকদের…

  • হাসন রাজার জাদুঘর

    সুরমা নদীর সুরে গাঁথা একটি সুন্দর শহর, সুনামগঞ্জ। এই শহরে অবস্থিত হাসন রাজার বাড়ি ও জাদুঘর হলো একটি অমূল্য ধর্মকথা, যা সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক পরিচয় বজায় রাখে। ১৮৫৪ সালে হাসন রাজা এই শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই তার মহান কার্যক্রম চলে গিয়েছিল। তার স্মৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য তার বাড়িকে একটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে,…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *